বর্ষাকাল প্রবন্ধ রচনা | বর্ষার বাংলাদেশ রচনা | Borsakal Rachana| for class 6,8,9,10,11,12
বর্ষাকাল প্রবন্ধ রচনা | Borsakal Rachana|
বর্ষাকাল
অথবা, বর্ষার বাংলাদেশ
সূচনা: ষড়ঋতুর আবর্তনে গ্রীষ্মকালের পরেই বর্ষার স্থান। বর্ষা আসে সবাইকে জানান দিয়ে। আসে নতুন সাজে। আসে আকাশ ভরা মেঘ নিয়ে।
সজল বর্ষা:প্রকৃতির খেলায় আষাঢ় শ্রাবণ দু’মাস বর্ষাকাল। এ সময় আকাশে নবীন মেঘ জমে ওঠে। আসে শ্যামল সুন্দর বর্ষা। বাংলাদেশের বর্ষা আসে রাজ সমারোহে। ঘন ঘন বিদ্যুতের চমক ও গুরুগম্ভীর বজ্রধ্বনির অতি ভৈরব হরষে’ সূচিত হয় তার শুভাগমন। সে সঙ্গে নিদাঘ দগ্ধ পৃথিবীতে ঘনিয়ে ‘ছায়াঘন দিন ।’ আকাশের একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্ত পর্যন্ত ঘনকালো পুন্জীভূত মেঘের অপূর্ব স্তরবিন্যাস। নিচে ঘনায়মান বন্য প্রকৃতির মেঘকাজল ছায়া বিস্তারের জেগে ওঠে পৃথিবী। নিঃসীম শূন্য হতে বন্ধনবিহীন বায়ুপ্রবাহ দুরন্ত বেগেম ছুটে আসে। শুরু হয় শীতল ধারাবর্ষণ। চারদিকের অপেক্ষমাণ তৃষিত বিশুষ্ক প্রান্তর, মাঠ, জলাশয়, নদী-নালা, খাল-বিলে বহুদিন পরে জাগে প্রবল প্রাণোচ্ছ্বাস। মাটির কঠিন শাসন ভেদ করে নব তৃণাঙ্কুরের দল বের হয়েআসে। প্রকৃতির সকল অঙ্গ থেকে গ্রীষ্মের ধূসর-ক্লান্তি মুছে গিয়ে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে সজল বর্ষার নয়নরন্জন রূপশ্রী। এক অপূর্ব শ্যামলিমার মহাসমারোহ ঘনিয়ে আসে বর্ষা প্রকৃতির পুষ্প বিকাশের লগ্ন। এ সময় কদম্ব, কেয়া, যুথিকা, গন্ধরাজ, হাসনাহেনার বিবিধ বর্ণ ও বিচিত্র গন্ধের উৎসবে সুরভিত বঙ্গ প্রকৃতির হৃদয়ের দ্বার খুলে যায় অবলীলায়।
বর্ষার কারণ: বাংলাদেশে বর্ষা ঋতুর এ সমারোহপূর্ণ আগমনের পেছনে ভৌগোলিক কারণ বর্তমান। গ্রীষ্মকালে মৌসুমি বায়ু ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর হতে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প ধারণ করে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়। এ বায়ু হিমালয়ে বাধা পেয়ে নিম্নাচ্ঞলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। বাংলাদেশে হিমালয়ের নিম্নাঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এ বৃষ্টির ফলে নদী-নালাগুলো দু’কূল প্লাবিত করে ছুটে চলে। বাংলাদেশ তাই বর্ষাকালের অপূর্ব লীলাভূমি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছরই বর্ষা বাংলাদেশের তৃষিত ভূমিকে পানিদানে পরিতৃপ্ত করে এবং ফুলে ফসলে পরিপূর্ণ করে তোলে। বর্ষার দানে সুজলা-সুফলা, শস্য- শ্যামলা বাংলাদেশ ফুলে ফলে ভরে ওঠে।
প্রকৃতিতে বর্ষার প্রভাব: বাংলাদেশ পল্লীকেন্দ্রিক সমতল দেশ। বর্ষাকালে যখন প্রবল ধারায় বারিপাত শুরু হয়, তখন অল্প দিনের মধ্যেই খাল-বিল, পকুর, ডোবা-নালা পানিতে পূর্ণ হয়ে থৈ থৈ করতে থাকে। এরপর নদীগুলো দু’কুল প্লাবিত করে মাঠ-ঘাট ভাসিয়ে দিয়ে ছুটে চলে। পল্লী অঞ্চলের নিম্নভূমিগুলো পানিতে ডুবে যায়। ঘর বাড়িগুলো গাছপালা বেষ্টীত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপের আকার ধারণ করে। ধান-পাটের ক্ষেতগুলো পানির ওপর মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকে। চারদিকের গাছপালা নতুন পানির স্পর্শে সতেজ শ্যামল রূপ ধারণ করে। পুকুরে ও খালে-বিলে নানা রকম জলজ উদ্ভিদ গজিয়ে ওঠে বৈচিত্র্যময় দৃশ্যের অবতারণা করে।
জনজীবনে বর্ষার প্রভাব: গ্রীষ্মের অতি সাধারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণির কৃষদের জন্য বর্ষা নিয়ে আসে সওগাত। উপহার দেয় ধান ও পাট। কৃষক মনের আনন্দে বৃষ্টির পানিতে ভিজে ভিজে মাঠে চাষ করে। গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহে ক্লিষ্ট পল্লিবাসীর জীবনে বর্ষা আনে এক অনাবিল শান্তি ও পরিতৃপ্তি। তবে বর্ষা পল্লিবাসীর জীবনে আন্দের অবিরাম বারি বর্ষণের সাথে সাথে সীমাহীন দুঃখ দুর্ভোগও বয়ে আনে। রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত হয়ে চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। বৃষ্টিতে ভিজেই নিত্যকার্য সম্পন্ন করতে হয়। নৌকা, ডিঙি, ভেলা প্রভৃতি চলাফেরার জন্য ব্যবহার হয়অ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে মানুষকে খুব কষ্ট ও দুর্ভোগ পোহাতে হয় । মাঝে মাঝে প্লাবনের তোড়ে ঘরবাড়ি গবাদিপশু ভেসে যায় এবং মানুষকে দুর্দশার শেষ প্রান্তে পৌছে দেয়। অপরদিকে শহরাঞ্চলের মানুষের জন্য বর্ষা নিয়ে আসে স্বস্তি ও আরামের স্নিগ্ধ পরশ। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহের পরে কবি প্রাণের সে আকুতিরই যেন প্রতিধ্বনি-’আল্লাহ মেঘ দে, ছায়া দে, পানি দে রে তুই’।
উপসংহার:বর্ষা আর বাংলাদেশ যেন একে অপরের সাথে নাড়ির বন্ধনে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রকৃতির আপন খেলায় আবর্তিত বর্ষা বাংলাকে অপরুপ রুপে সাজায় এবং উপহার দেয় সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা প্রকৃতি। এজন্যই বর্ষার দান অতুলনীয়।
Dialogue preparation for jsc exam