সনেট কাকে বলে? সনেটের বৈশিষ্ট্য | snigdhasokal.com

 সনেট কাকে বলে?

সনেট কাকে বলে? সনেটের বৈশিষ্ট্য | snigdhasokal.com

সনেট শব্দটি এসেছে ইতালীয় সনেটা ( Sonetto)শব্দ থেকে। সনেটের সাধারণ অর্থ হচ্ছে মৃদু ধ্বণি বা   একটি ক্ষুদ্র ধ্বনি। সনেটো শব্দটি আদিতে ছিল ইতারীয় ভাষায় সংগীত জগতের একটি পরিভাষা। যেসব পদ বাদ্যযন্ত্রে সাথে মিলিয়ে গাওয়া হতো তার নাম ছিল সনেটো। সনেটের বিবর্তন কেউ কেউ প্রেম সংগীত েএবং আরবি গজলে প্রভাবের কথা বলেন। তবে একথা অনস্বীকার্য যে, সনেটে র ইতিহাসে প্রাচীর ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্বাংশে অবস্থিত প্রভাসের ক্রবাদুরদের প্রেমমূলক গান ও ছড়ার প্রভাব রয়েছে এবং পরবর্তীতে ইতালিতে তা পরিপুষ্ট লাভ করেছে।
একটিমাত্র অনুভূতি বা অখন্ড কল্পনা নিয়ে বিশেষ ছন্দরীতিতে রচিত চৌদ্দ বা আঠারে মাত্রবিশিষ্ট চৌদ্দ পঙক্তির কবিতাকে সনেট বলে।
অর্থাৎ সনেটে চৌদ্দ পঙক্তি থাকে িএবং পয়ার বা মহপয়অরের ন্যায় এতে প্রতি পঙক্তির মাত্রা সংখ্যা চৌদ্দ বা আঠারো। এই চৌদ্দ অক্ষর সমন্বিত চৌদ্দ পঙক্তিতে এবং বিশেষ ছন্দে রচিত যে তন্ময় কবিতায় একটিমাত্র অখন্ড ভাব-কল্পনা বা অনূভূতি প্রকাশ করে তাকে সনেট বলে।
সনেটের চৌদ্দপদ দুই ভাগে বিভক্ত।
১। প্রথম আট লাইনকে অষ্টক 
২ শেষ ছয় লাইনকে ষটক বলে।
অষ্টকে অর্থাৎ প্রথম আট লাইনের স্তবকে যে ভাব -কল্পনার েইঙ্গিত দেয়া হয়, ষটকে অর্থাৎ পরবর্তী ছয় লাইনে তা পরিপূর্ণতা লাব কর্ েঅষ্টকের অনুগামী ষটক এবং উভয় স্তবক মিলে  একটি অখন্ড ভাব ফুটে ওঠে।
অষ্টক আবার গড়ে ওঠে দুটো চতুষ্ক মিলে। তেমনি ষটকাংশে থাকে দুটো ত্রিপদিকা। 
একটি সনেট মূলত অষ্টক এবং ষটক এই দুই ভাগে বিভক্ত হলেও চারটি স্তরে বিন্যস্ত –
[প্রথম চতুষ্ক ( চার লাইন) + দ্বিতীয় চতুষ্ক (চার লাইন) + প্রথম ত্রিপদিকা ( তিন লাইন) + দ্বিতীয় ত্রিপদিকা ( তিন লাইন) ] এই চারটি স্তর অর্থাৎ দুটো চতুষ্ক ও দুটো ত্রিপদিকা মিলে গড়ে ওঠে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কবিতা সনেট-
সনেটে – 
কখখক     অথবা   কখখক  বা  কখখক
কখখক    কখখক বা কখখক
গঘঙ     গঘগ     গঘঙ
গঘঙ    ঘগঘ      ঘগঙ
প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকারের অন্ত্যানুপ্রাস হতে পারে।
বাংলা সাহিত্যে আদিযুগ থেকেই সনেটের নমুনা পাওয়া যায়। কহ্নপাদের – নগর বাহিরি রে ডোম্বি তোহেরি কুড়িআ ( ১০ সংখ্যক) , শবর পাদের “ উঁচা উঁচা পাবত তঁহি বসই সবরী বালী ( ২৮ সংখ্যক) বা “গঅনত তইলা বাড়ী হেঞ্চে বরাড়ী ( ৫০ সংখ্যক) চর্যাপদগুলো চতুর্দশপদী।
মধ্যযুগেরর কবি চণ্ডীদাসের – এমন পীরিতি কভু দেখি নাই শুনি । বা দুহুঁ কোরে দুহুঁ কাঁদে বিচ্ছেদে ভাবিয়া ইত্যাদি। আবার আধুনিক যুগের  শুরুতে ঈশ্বরগুপ্তের ‘নিদ্রাকালে শঠ উপকারী’ এবং ’ভারত সন্তানের প্রতি’ কবিতা দুটো চতুর্দশপদী। উপর্যুক্ত কবিদের হাতে চতুর্দশ সৃষ্টি হলেও সনেটের গূঢ় গভীর ভাব ও সংহত গঠনশৈলী দৃষ্ট হয় না। প্রকৃতপক্ষে বাংলা সাহিত্যে মাইকেল মধূসূদন দত্ত প্রথম সনেট রচনা করে। পরবর্তীতে দেবেন্দ্রনাথ সেন, অক্ষয়কুমার বড়াল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রমথ চৌধুরী , মোহিলাল মজুমদার প্রমুখের হাতে সনেট রচিত হয়। তবে আধুনিক কবিরা সনেটের নিয়ম পুরোপুরি মেনে সনেট রচনা করেন নি।

কতিপূ সনেট কবিতার  নামঃ

বাংলা কবিতায় মধুসূদনের ‘কবি মাতৃভাষা’, ’বঙ্গভাষা’, উপক্রম, সায়ংকালের তার, দেবেন্দ্রনাথ সেনের ’আমি রাক্ষসী, অক্ষয়কুমার বাড়ালের ‘নিত্যকৃষ্ণ বসু’, রবীন্দ্রনাথের ’প্রাণ’, বঙ্গমাত, ত্রাণ, প্রমথ চৌধুরীর ‘সনেট’, রজনীগন্ধা, মোহিতলাল মজুমদারের ‘শ্রাবণ বর্শবলী’ ই্ত্যাদি সনেটের উদাহরণ

  সনেট কী? সনেটের রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য আলোচনাঃ

সনেটঃ সনেটট শব্দটি ইতালীয় সনেটো শব্দ খেকে উদ্ভূত। এটা এক প্রকার মন্ময় কবিতা। একটিমাত্র অখন্ড ভাব-কল্পনা বা অনুভুতি-কণা যখন ১৪ অক্ষর সমন্বিত (কখনো কখনো ১৮ অক্ষরেও ব্যবহৃত হয়) চতুর্দশ পঙক্তিতে একটি বিশেষ  ছন্দ রীতিতে আত্মপ্রককাম করে , তখন তাকে সনেট নাম েঅভিহিত করা হয় । 

সনেটের জনক কে?

ইতালীয় কবি পেত্রার্ক সনেটটের জন্মদাতা।
সনেটের প্রথম আট পঙক্তিতে যে ভাব -কল্পনার ইঙ্গিত করা হয়, তাকে অষ্টক ( Octave) বলে। পরবর্তীত যে ছয় পঙক্তি পূর্বোক্ত ভব- কল্পনা বিস্তিৃততি সাধন বা ব্যাখ্যা করে , তাকে বলে ষটক ( Sestet) বলে। অষ্টকের আট পঙক্তি  আবার দুই ভাগে বিভক্ত- চার পঙক্তি সমন্বিত প্রত্যেকটি ভাগের নাম চতুষ্ক ( Quartet)  ষটকের তিন পঙক্তি সমন্বিত দুভাগের প্রত্যেক ভাগকে ত্রিপদিকা ( Triver) বলে। মনে রাখতে হবে যে, সমগ্র কবিতাটি যেন একটি অখন্ড ভাবের দ্যোতনা করে। পঙক্তিগুলোর মিল বিন্যাস সাধারণত ক খখক, কখখক, গঘঙ, গঘঙ অথবা কখখক, কখখক, গঘ, গঘ, গঘ অথবা গঘঙ, গঘঙ।
শেক্সপীয়র মিল বিন্যাসের এই সনাতন পন্থা মেনে চলেন নি। শেক্সপীয়রের সনেটের মিল বিন্যাস হলো   এ রকম — ক খ, ক খ, গ ঘ, গ ঘ, ঙ চ, ঙ চ , ঙ চ  , ছ ছ। শেক্সপীয়র অষ্টক ও ষটক বিভাগও মেনে চলেন নি।
কার সাথে তুল নিবে, লো সুর সুন্দরী    ক
ও রূপের ছটা কবি এ ভব – মণ্ডলে?      খ
আছে কি লো হেন খনি, যা গর্ভে ফলে     খ
রতন তোমার মত, বহু সহচরী –           ক
গোধূলির কি ফণিনী যা সু -কবরী           ক
সাজায় সে তোমসমমণির উজ্জ্বলে?           খ
ক্ষণমাত্র দেখি তোমা নক্ষত্র মণ্ডলে            খ
কি হেতু? ভাল কি তোমা বাস না শর্ব্বরী? ক
…………………………………………………
হেরি অপরূপ রূপ বুঝি ক্ষুণ্ন মনে,            গ
ফণিনী রজনী রাণী তেঁই অনাদরে            ঘ
না দেয় শোভিতে তোমা সখীদল সনে        গ
সবে কেলি করে তারা সুহাস অম্বরে।        ঘ
কিন্তু কি অভাব তব, ও লো বরঙ্গননে?       গ
ক্ষণমাত্র দেখি মুখ, চির আখি স্বরে             ঘ
————মধুসূদন দত্ত।
সনেট নির্মাণ নৈপুণ্য বিশেষ  একটি আঙ্গিক কুশলতার ওপর র্ভির করে। এর আঙ্গিক বিশেষ রীতিসম্মত হওয়ায় অনেক কবি এক কবি কল্পনার স্ফূর্তির পক্ষে প্রতিবন্ধক মনে করেন। ওয়ার্ডসওয়ার্থ এই বন্ধনকে বরং কল্পনা বিস্তারের প্রভুত সহায়ক মনে করতেন। D. G. Rossett ও সনেটকে momets monument’ নামে অভিহিত  করেছেন। আসল কথা  এই যে, কাব প্রতিভা রোমান্টিক কিন্তু অসংযত,তার পক্ষে সনেট  রচনা উপযোগী নয় । ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্যে যারা একাধারে কল্পনার ঃঅথব সংযত, তাদের হাতেই এই শ্রেণির কবিতা  বিশেষ উৎকর্ষ লাভ করেছে।

সনেটের বৈশিষ্ট্যঃ

  • এটা সাধারণত চৌদ্দ অক্ষর (কখনও ১৮ অক্ষর) সংবলিত চৌদ্দটি পঙক্তির কবিতা।
  • এতে একটিমাত্র ভাবের দ্যোতনা থাকবে।
  • অষ্টক ও ষটকের বিভাগ রক্ষা করা সনাতন রীতি হলেও রবীন্দ্রনাথ প্রমুখ এই নিয়ম মেনে চলেন নি।
  • সনেটের ভাব গভীরতা ও ভাষায় ঋজুতা থাকবে।
  • বিশেষ নির্মাণ রীতি অসুসরনে করতে হয় বলে সনেটের স্বতঃস্ফূর্তি অন্যান্য দীতিকবিতার তুলনায় অনেক কম।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button