
(সংবিধান কি) প্রত্যেকটি রাষ্টেই একটি সংবিধান বা শাসনতন্ত্র থাকে। এমন কি স্বৈরাচারী সরকারেরও সংবিধান আছে। সংবিধান বা শাসনতন্ত্র ভিন্ন কোন রাষ্টই পরিচালনা করা যায় না। সংবধানবিহীন রাষ্ট্য কর্ণধারবিহীন জাহাজারে সাথে তুলনীয়। কেননা সংবিধানের ভিত্তিতেই একটি রাষ্ট্র পরিচালিত হয় , সরকার গঠিত হয়, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্য ক্ষমতা বন্ঠিত হয়, সরকারি কাজর্ম পরিচালিত হয় িএবং ব্যক্তি ও সরকারের মধ্যে সম্পর্ক নিরুপিত হয় । তাছাড়া সংবিধানের তত্ত্বগত ধারনার বাসতবায়নই হলো সরকারের প্রধান কাজ। সংবিধান রাষ্টেও্র বৈশিষ্ট্য সুনুর্দিষ্ট করে। তাছাড়া রাষ্ট্রের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ খাতগুলোর কল্যাণমূলক যে দিকসমূহ রয়েছে সেগুলো সন্নিবেশনের মাধ্যমে গঠিত হয় একটি আদর্শ বা উত্তম সংবিধান। তবে রাষ্ট্রে আবার সরকার পদ্ধতি, ঐতিহ্য প্রভৃতি কারণে রাষ্ট্রভেদে সংবিধান ভিন্ন ভিন্ন রূপ পরিলিক্ষিত হয় । যেমন বলা হয়ে থাকে ব্রিটিশ সংবিধান বা শাসতন্ত্র অলিখিত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সংবিধান লিখিত হলেও বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর িএই রাষ্ট্রের সংবিধান সবচেয়ে ক্ষুদ্র। আবার আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সংবিধান সবচেয়ে দীর্ঘ সংবিধান। সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতি ক্ষেত্রেও তারতম্য পরিলক্ষিত হয় । যেমন- পদ্ধতিগত তারতম্যের কারণেই ১৭৮৯ সালে কার্যকরী মার্কিন সংবিধান আ অবধি মাত্র ২৭ বা সংশোধিত হয়েছে অথচ ১৯৭২ প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধান মাত্র ৫০ বছরে সংশোধিত হয়েছে ১৮ বার।
আরো পড়ুন ঃ ছুটির জন্য আবেদন
সংবিধান কি? সংবিধানের সংজ্ঞা:
সংবিধান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। ইংরোজি ‘
Constitution’ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হচেছ সংবিধান। Constitution’ শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Constiture থেকে এসেছে। যার অর্থ হচ্ছে প্রতিষ্ঠা। ব্যুৎপত্তিগত অর্থে সংবিধান হচেছ রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের আদেশ। সাধারণত সংধিান বলতে রাষ্ট্র পরিচালনার কতগুলো বিধিবিধানকে বোঝায়। তবে ব্যাপক অর্থে সংবিধান হচ্ছে দেশের শাসন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী লিখিত ও অলিখিত নিয়মকানুনের সমষ্টি।
সংবিধান সম্পর্কে বিভিন্ন রা্ষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো:
১. এরিস্টটলের মতে, “রাষ্ট্র কর্তৃক পছন্দমত জীবন প্রণালীই সংবিধান।
২. হারম্যান ফাইনারের মতে, সংবিধানহলো ক্ষমতা সম্পর্কের আত্মজীবনী।
৩. কে. সি. হুইয়ার এর মতে, “ একটি দেশের সংবিধান হলো সেসব নিয়ম বা রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ও সরকারি ক্ষমতা প্রয়োগকারী বিভাগগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে।
৪. স্ট্রং এর মতানুসারে, “সংবিধান হলো এমন কতগুলো নীতির সমষ্টি যার মা্ধ্যেমে সরকারের ক্ষমতা, শাসিতের অধিকার ও উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক স্থিরীকৃত।
৫. আর. এন. গিলক্রিস্ট বলেন, “সংবিধান বলতে কতগুলো লিখিত বা অলিখিত নিয়মকে বুঝায় যা ভিত্তিতে সরকার গঠিত হয়, সরকারের বিভাগসমূহের মধ্য ক্ষমতা বন্টিত হয় িএবং ঐসব বিভাগের কার্যক্ষেত্রে নির্ধারিত হয়”
সংবিধানের বৈশিষ্ট্যঃ
সংবিধানের সংজ্ঞাসমূহ পর্যালোচনা করলে সংবিধান বা শাসনতন্ত্রের মৌলিক কিছু বৈশিষ্ট্য পরিদৃষ্ট হয়; যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
প্রথমতঃ সংবিধান হল একটি আইনগত ধারণা।
দ্বিতীয়তঃ বিধিবদ্ধ আইন ছাড়াও সংবিধান বলতে বহু রীতি নীতি প্রথাকে নির্দেশ করে।
তৃতীয়তঃ সংবিধান হলো্ দেশের মৌলিক ও সর্বোচ্চ আইন।
চতুর্থতঃ সংবিধানে সরকারের মূল কাঠামো এবং গঠন স্থির করে দেয়।
পঞ্চমতঃ সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, তাদের গঠন, ক্ষমত ও কার্যবলী, সরকারের সঙ্গে নাগরিকের সম্পর্ক সবকিছুই সংবিধান দ্বারা স্থিরীকৃত হয়।
ষষ্ঠতঃ রাষ্ট্রের সার্বভৌম সমতার অধিকারী কে এবং কিভাবে এই ক্ষমতা ব্যবহৃত হবে, সে বিষয়েও শাসনতন্ত্র নির্দেশ করে।
সপ্তমতঃ শাসনতন্ত্র বা সংবিধানে সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে।
অষ্টমতঃ সংবিধানের মধ্যে রাষ্ট্র চরিত্র প্রতিফলিত হয়।
নবমতঃ সর্বোপরি সংবিধান হলো রাষ্ট্রের জীবনপ্রণালী।