শ্রমের মর্যাদা রচনা -snigdhasokal.com
শ্রমের মর্যাদা রচনা
ভূমিকা :
`… a hard working street-cleaner is a better man than a lazy scholar .’
অণু থেকে অট্রালিকাপযন্ত,বিশ্বসভ্যতার প্রতিটি সৃষ্টির মূলে রয়েছে শ্রম ।জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পযন্ত এ্ই পৃথিবীর সব কাজে –খাদ্য,বস্ত, অন্ন,বাসস্থান ,চিকিৎসা –যা কিছু দৃশ্যমান সবই অর্জিত হয়েছে শ্রমের দ্বারা ।পবিএ কুরআনে ঘোষিত হয়েছে,‘লাইসা লিল ইনসানে ইল্লা মা সাওা ।’অর্থাৎ ,মানুষের জন্যে শ্রম ব্যতিরেকে কিছুই নেই ।জ্ঞানীর জ্ঞান ,বিজ্ঞানের অথ্যাশ্চয আবষ্কার ,ধর্মসাধকের আত্নোপলব্ধি,ধনীর ধনৈশ্বয ,যোদ্ধঅর যুদ্ধে জয়লাভ সবকিছুই শ্রমলদ্ধ ।মানুষ তার উদ্যম ,পচেষ্টা ও নিরলস শ্রম দিয়েই পৃথিবী জয় করেছে ।মানুষের এই জযের ইতিহাসই বর্তমান পৃথিবীর চিএ ।
শ্রমের গুরুত্ব বা প্রয়োজনঃ বিখ্যাত মনীষী দয়স্তয়ভস্কি বলেছিলেন ,‘মানুষের কাছে তার জীবনের চেয়ে প্রিয় আর কিছুই নেই ।এই জীবন সে একবারই পায় ,।বর্তমান পৃথিবীর মানুষেরও জীবনদর্শ আজ জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ ।জীবনকে যতোভাবে সুখী,সমৃদ্ধ ও পরিপূর্ণ করে তোলা যায় সে চেষ্টাই আজ পৃথিবীর মানুষের লক্ষ্য ।আর সেজন্য তার শ্রম ও সাধনার অন্ত নেই ।তাই জীবনে বিকশিত ও সফল করতে হলে শ্রমের কোনো বিকল্প নেই ।‘Man is the architect of his own fate.’-মানুষ নিজেই তার নিজের ভাগ্যের নির্মাতা ।আর এই ভাগ্যকে নির্মাণ করতে হয় নিরলস শ্রম দ্বারা ।মানুষের জন্ম দৈবের অধীন,কিন্তু কর্ম মানুষের অধীন ।যে মানুষ কর্মকেই জীবনের ধ্রুবতারা করেছে,জীবন-সংগ্রামে তারই জয় ।কর্মই সাফল্যের চাবিকাঠি ।পরিশ্রমেই মানুষের যথার্থ শাণিত হাতিয়ার ।সৌভঅগ্যের স্বর্ণশিখরে আরোহণের একমাএ উপায় হচ্ছে শ্রম ।পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে শুরু করে বর্তমান সভ্যতা পযন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই শ্রম নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে ।মানবজীবন অনন্ত কর্মমূখর ।বহু প্রতিকূর পরিবেশের সঙ্গে যুদ্ধ করে করে তাকে জীবনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয় ।এ জন্যে তাকে নিরন্তর কাজ করে যেতে হয় ।জীবনের কোনো কাজের ক্ষেত্রে কুসুমাস্তীর্ণ নয় ।সর্বএই কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবনযুদ্ধে নিয়োজিত থাকতে হয় ।তাই,জগৎ কর্মশালা আর জীবনমাএই পরিশ্রমের ক্ষেএ । Virgil বলেন ,‘‘The dignity of labour makes a man self. Confident and high ambitious .So,the evaluation of labour is essential .’ঠিকই ,মানবজীবনে শ্রমের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম ।জীবনে আত্ন্রিতিষ্ঠা লাভ করতে হলে এবং যথাযোগ্য মযাদায় প্রতিষ্টিত হতে হলে মানুষকে নিরলস পরিশ্রম করতে হয় তাই শ্রমের সফলতা ,শ্রমেই সুখ,শ্রমেই জীবন ।আমরা সবাই শ্রমসৈনিক ।শ্রম ব্যতীত জীবনের উন্নতি কল্পনামাএ ।
আমরা যা কিছু করতে চাই না কেন ,যতো সাফল্য ,যতো সমৃদ্ধি ,যতো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ,একুশ শতকের এই প্রযুক্তিনির্ভর ও প্রযুক্তিনিয়ন্তিত পৃথিবীতে শ্রম ছাড়া এর কোনো কিছুই সম্ভব নয় ।পৃথিবী বদলে যাচ্ছে ।নতুন পৃথিবী ,নতুন স্বপ্ন ।পৃথিবীর মানুষ এই নতুন স্বপ্নে বিভোর ।আমরা বুঝতে পারছিন না পৃথিবীতে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে ,নতুন রেনোসাঁস ।এই নতুন রেনেসাঁস ও নতুন জীবনদর্শনের তাৎপযই আলাদা ।এই নতুন জীবনদর্শনের মূল কথাই হচ্ছে জীবনকে যুদ্ধ ও পরিপূর্ণ করা ।সেজন্যই এতো আয়োজন ,এতা উদ্যোগ ,এতো শ্রম ও সাধনা ।জীবনে দুঃখ আছে ,গ্লানি আছে,পরাজয় আছে ,ব্যর্থতা আছে ,কিন্তু সেটাই শেষ কথা নয় ।মানুষ তার উদ্যম,প্রচেষ্টা ও শ্রম দিয়ে এই ব্যর্থতাকে জয় করেছে ।জয় করে চলেছে ।মানুষের এই জয়ের ইতিহাসই দিকে দিকে ঘোষিত হচ্ছে ।বর্তমান পৃথিবীর মানুষও এই অবিরাম অব্যাহত প্রয়াস ,উদ্যম ও শ্রমসাধনাকেই বেছে নিয়েছে ।তার শ্রমের বলেই সফল তাকে হতে হবে । সফল সে হচ্ছে ও ।জ্ঞানে ,বিজ্ঞানে ,নৈপুণ্যে ,দক্ষতায় ,শিল্পে ,সাহিত্য ,সঙ্গীতে ,ক্রীড়ায় ,আবিষ্কার উদ্ভাবনে ।সে তার শ্রম ও সাধনায় আলোকিত ,বিকশিত ,উদ্ভাসিত করেছে পৃথিবী ।
সৌভাগ্য ও প্রতিভা বিকাশে শ্রমের ভূমিকাঃ প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই রয়েছে সুপ্ত প্রতিভা ।শ্রমের জিয়নকাঠির স্পর্শেই তার বিকাশ ।শ্রমই মানুষকে সুন্দর সার্থক করেছে ।জীবনকে প্রতি মুহূর্তে অর্থতময় করেছে ।ফুলের মতই ছড়িয়ে পড়েছে তার প্রতিভার সৌরভ ।জ্ঞানে –বিজ্ঞানে ,সাহিত্যে –শিল্পে যে মানুষ বরণীয়-স্মরণীয় ,পরিশ্রমেই তাঁদের সাধনপিঠ ।সেখানেই তাঁদের সিদ্ধি ।সেই সাফল্যের অকৃপণ দানেই মানবসভ্যতা যুগযুগান্তর ধরে পুষ্ট হয়েছে ,হয়েছে সমৃদ্ধ ।
সৌভাগ্য ও প্রতিভা বিকাশে শ্রমের ভূমিকা : প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই রয়েছে সুপ্ত প্রতিভা ।শ্রমের জিয়নকাঠির স্পর্শেই তার বিকাশ ।শ্রমই মানুষকে সুন্দর সার্থক করেছে ।জীবনকে প্রতি মুহূর্তে অর্থময় করেছে ।ফুলের মতোই ছড়িয়ে পড়েছে তার প্রতিভার সৌরভ ।জ্ঞানে –বিজ্ঞানে ,সাহিত্য –শিল্পে যে মানুষ বরণীয় –স্মরণীয় পরিশ্রমিই তাঁদের সাধনপিঠ ।সেখানেই তাঁদের সিদ্ধি ।সেই সাফল্যের অকৃপণ দানেই মানবসভ্যতা যুগযুগান্তর ধরে পুষ্ট হয়েছে ,হয়েছে সমৃদ্ধ ।
শ্রমের প্রকারভেদ :শ্রমকে সাধারণত দু ভাগে ভাগ করা হযেছে ।যেমন :মানসিক শ্রম ও শারীরিক শ্রম ।এই উভয় প্রকার শ্রমের গুরুত্বই অপরিসীম ।
মানসিক শ্রম : মানসিক শ্রম ছাড়া মানসিক উন্নতি সম্ভব নয় ।কথায় বলে –‘অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা ।’শ্রমবিমুখ ব্যক্তির মনে কখনো সুচিন্তা ও সম্ভাব উদয় হয় না ।পক্ষান্তরে পরিশ্রমী ব্যক্তির মন ও মস্তিষ্ক সবসময় কু-চিন্তা থেকে দূরে থাকে ।বৈজ্ঞানিক ,দার্শনিক ,সাহিত্যিক,চিকিৎসক ,রাজনীতিবিদ ,অর্থনীতিবিদ ,সমাজতও্ববিদ ও শিল্পীল পরিশ্রম মূলত মানসিক ।তবে তাঁদের এই মানসিক শ্রমকে বাস্তবে রূপায়িত করতে গিয়ে তাঁরা কায়িক শ্রমও করে থাকেন ।
শারীরিক শ্রম বা কায়িক শ্রম : জগতের সকল জীবকেই বেঁচে থাকার জন্যে কম-বেশি শারীরিক ও মানসিক শ্রম দিতে হয় ।মানসিক শ্রম একটা কাজের প্রেরণা জোগায় আর শারীরিক শ্রম তা সমাধা করে ।সৃষ্টিকর্তা আমাদের শারিরীক শ্রমের নিমিও হাত-পা ইত্যাদি অঙ্গ –প্রত্যঙ্গ দিয়েছেন ।শারীরিক শ্রম আত্নসম্মানের পরিপন্থী নয় বরং সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভের প্রধান উপায় ।চাষি ,শ্রমিক ,কুলি ,মজুর –এরা দেশ ও জাতিকে রক্ষার মহান দায়িত্ব নিয়েই শারীরিক শ্রমে অবতীর্ণ হয় ।তাই কবি কাজী নজরূল ইসলাম তাদের বন্দনা করেছেন –
‘গাহি তাহাদের গান -…
শ্রম-কিণাঙ্ক –কঠিন যাদের নির্দয় মুঠি –তলে এস্তা ধরণী নজরানা দেয় ডালি ভরে ফুলে ফুলে ।’
শ্রম ও সভ্যতা : মানবপ্রবাহের সেই কোন আদি উৎস থেকে শুরু হয়েছিল শ্রমের বন্যা,আজও তার শেষ নেই ।যুগে যুগে মানক –সভ্যতার যে ক্রমবিস্তার ,শ্রীবৃদ্ধি ,তা লক্ষ-কোটি মানুষের তিল তিল শ্রমেই সম্ভব হয়েছে ।মানুষ তার শ্রমের উপচার দিয়ে সাজিয়েছে সভ্যতার তিলোওমাবিগ্রহ ।একবিংশ শতাব্দীর এই সমুন্নত সভ্যতার মূলেও আছে মানুষের অনলস শ্রম –সাধনা ।এই শ্রমজীবী মানুষই নতুন নতুন সাম্রাজ্যের পওন করেছে ।তাদের শ্রমের ওপরই গড়ে উঠেছে সভ্যতার বিজয়স্তম্ভ ।শ্রম যে শুধু ব্যক্ত-জীবনকেই নানা সার্থকাতায় সমৃদ্ধ ও ঐশ্বযময় করে তোলে তা নয় ,সমাজজীবনের ওপরও পড়ে তার গভীর ব্যপ্তি প্রতিফলন ।তাই পরিশ্রম শুধু সৌভাগ্যের নিয়ন্তই নয়,সভ্যতা বিকাশেরও হাতিয়ার ।বর্তমান মানবজাতি যে সভ্যতার উচ্চাসনে আরোহণ করেছে তার মূলে রয়েছে হাজারো দিনের শ্রম ।পৃথিবীকে সুন্দর ও মানুষের বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার মূলে রয়েছে কঠোর শ্রম ।পৃথিবীতে যে জাতি যত পরিশ্রমী ,সে জাতি তত উন্নত ।রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্র,জাপান ,জার্মানি ,চিন প্রভৃতি দেশের মানুষ পরিশ্রমী বলেই তারা আজ উন্নত ও সভ্য জাতি হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত ।
ব্যক্তিজীবনে শ্রমের উপযোগিতা : শ্রম যে শুধু সমষ্টির জীবনকেই সুন্দর ও িমহিমাময় করে তা নয় ,ব্যক্তিজীবনেও তার গুরুত্ব গভীর ,ব্যাপক ।যে অলস ও শ্রমবিমুখ তার জীবনে নেমে আসে অসুন্দরের অভিশাপ ।নানা ব্যর্থতার গ্লানিতে সে জীবন পদে পদে অনাদৃত ,লাঞ্ছিত ।তার জীবনের স্বাভাবিক অগ্রগতি রুদ্ধ হয় ।জীবনের সাফল্য –স্পন্দিত প্রাঙ্গণে তার নেই প্রবেশের ছাড়পএ ।মানুষের স্নেহ-ভালোবাসার অঙ্গন থেকে ঘটে তার চিরনির্বাসন ।থাকে শুধু অভিশপ্ত জীবনের সীমাহিন অন্তর্জ্বালা আর লাঞ্চনা ,শুধুই ‘প্রাণ ধারণের গ্লানি ‘। পক্ষান্তরে ,পরিশ্রমী মানুষ দেহে ও মনে সুস্থ ,সুন্দর ।সার্থকতার ছন্দে সে –জীবন নিত্য উচ্ছলিত ।শ্রমের ক্লান্তি তার জীবনে বিশ্রামের মাধুয ছড়িয়ে দেয় ।
ইসলামে শ্রমের মযাদা : আমাদের মহানবি স পরিশ্রমের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন ।তিনি নিজেকে শ্রমিকের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছেন ।শ্রমিকদের দেহের ঘাম শুকোবার আগেই তিনি তার পারিশ্রমিক পরিশোধের নির্দেশ দিয়ে শ্রম ও শ্রমিকের মযাদাকে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন ।
শ্রমিক লাঞ্ছনা : সমাজের উচ্চস্তরের মানুষ যারা,তারা করেছে সম্মানের কাজ ,গৌরবের কাজ ।সমাজের সমস্ত সুযোগ –সুবিধা নিজেদের কুক্ষিগত করে তারা তথাকথিত নিম্নশ্রেণির মানুষকে নিক্ষেপ করেছে অপমান ,ঘৃণা বঞ্চনার নিরন্ধ্র অন্ধকারে ।অথচ সেই শ্রমিকেরা চিরকাল মাঠে মাঠে বীজ বুনেছে ,পাকা ধান ফলিয়েছে ।তারা ধরীতীর বক্ষ নিদীর্ণ করে সোনার ফসল ফলিয়েছে –‘‘তাঁতি বসে তাঁত বুনে,জেলে ধরে মাছ,/বহুদূর প্রসারিত এদের বিচিএ কর্মভার তারি,পরে ভর দিয়ে চলিতেছে সমস্ত সংসার ’’অথচ তারাই পায় নি যথার্থ মানুষের সম্মান ।
শ্রমশীল ব্যক্তির উদাহরণ : বিশ্ববরেণা ব্যক্তি ও মনীষীদের জীবনসাধনা ও সাফল্যের কারণ নিরলস পরিশ্রম ।জর্জ ওয়াশিংটন ,আব্রাহাম লিঙ্কন ,বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইন প্রমুখ ব্যক্তিবর্ণ এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ।ইসলাম ধর্ম প্রবর্তক মহানবি হযরত মুহম্মাদ (স) ছিলেন কঠোর পরিশ্যমী ।তিনি বলেছেন ,
‘নিজ হাতে কাজ করার মতো পবিএ জিনিস আর কিছু নেই ।,
শ্রমবিমুখতা : শ্রমবিমুখতা ও অলসতা জীবনে বয়ে আনে নিদারূন অভিশাপ ।শ্রমহীন জীবনকে ব্যর্থতা এসে অক্টোপাসের মতো ঘিরে ফেলে ।কথায় বলে ,পরিশ্রমে ধন আনে ,পুন্য আনে সুখ’-এ কথা তর্কাতীতভাবে সত্য ।সে ব্যক্তি শ্রমকে অবজ্ঞা করে ,তার শ্রম সম্বন্ধে কোনো অভিজ্ঞতা নেই ,তার জীবনের কোনো মূল্য নেই ।বিখ্যাত মনীষী কার্লাইল বলেছেন ,আমি মাএ দুই প্রকৃতির লোককে সম্মান করি ,সম্মানের যোগ্য তৃতীয় নেই ।প্রথমত ,আমার সম্মানের পাএ ওই কৃষক এবং শ্রম-শিল্পী ,যিনি অক্লানত্ পরিশ্রম করে অন্ন-বস্তের সংস্থান করেন ,মানুষ হয়ে মানুষের মতো জীবনযাপন করেন ।ওই যে পান্ডুর বদনমন্ডল ,ওই যে ধূলি-ধূসর দেহ ,ওই যে কর্ম-কঠোর কর্কশ করযুগল ,তা- ই আমার শ্রদ্ধার যোগ্য ।দ্বিতীয়ত ,আমার সম্মানের পাএ তিনি ,যিনি আত্নোন্নতি সাদনে নিরত আছেন ,যিনি শরীরে নয় আত্নার খাদ্য সংস্তানে ,জ্ঞানধর্ম অনুশীলনে ব্যাপৃত আছেণ –এ দুব্যক্তি আমার ভক্তিভাজন ।,সুতরাং এমকাএ নির্বোধেরাই শ্রমকে অবজ্ঞা করে ।প্রতিষ্ঠা ,খ্যাতি ,প্রতিপওি ,যশ-সুনাম ,মযাদা এসব ত্রিবেণী ত্রিধঅরা দুর্বার স্রোতমুখে টিকে থাকার জন্যে প্রয়োজন শ্রম ও কঠোর সাধনা ।নিরন্তর ও নিরলস শ্রমে জীবনকাশ থেকে দারিদ্র্যের ঘনঘটা দূর হয়ে সফলতার নবীন সূযালোক উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে ।
আমাদের দেশে বা জাতীয় জীবনে শ্রমের মযাদা ও আমাদের কর্তব্য : দুঃখজনক হলেও সত্য যে ,কায়িক শ্রমের প্রতি আমাদের দেশের মানুষের এক ধরনের অবজ্ঞা ও ঘৃণা রয়েছে ।ফলে শিক্ষিত –সমাজের একটা বিরাট অংশ কায়িকশ্রম থেকে দূরে সরে আছে ।চরম বেকারত্ব ও আর্থিক অনটন সও্বে ও তারা শ্রমবিমুখ ।আর এই শ্রমবিমূখতার কারণেই আমরা আমাদের জাতিয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছি ,অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছি ।দুঃখ দারিদ্র্য ,অভাব –অনটন ,অনিযম-অব্যবস্থা ,অনাচার আচ্ছন্ন করে রেখেছে আমাদের জীবন ।এই চক্র থেকে পুরোপুরি আমরা বেরুনোর পথ পাচ্ছিনা ,চেষ্টাও করছিনা ।ক্লিষ্ট ,ক্লান্ত,ধ্বস্ত জীবনকে আঁকড়ে ধরে আমরা কোনোমতে বেঁচে আছি ।এই বাঁচার মধ্যে না আছে প্রাণ ,না আছে আনন্দ ।নিষ্প্রাণ নিস্তরঙ্গ আমাদের জীবন ,স্রোতহীন ও বদ্ধ নদীর মতো ।পৃথিবীর দিকে তাকালে অবাক চোখে বিমোহিত হওয়া ছাড়া আর কেোন পথ থাকে না আমাদের ।তারা তাদের নিরলস শ্রম ও সাধনায় জীবনকে কতো বিচিএরূপে সুখ-স্বাচ্ছন্দে ভরিয়ে তুলেছে ।আমরা যদি পেছনে পড়ে থাকি ,উদ্বুদ্ধ না হই ,উদ্যোগ গ্রহণ না করি ,পরিশ্রমী না হই সে হবে আমাদের ব্যর্থতা ।আর ব্যর্থতার দায়ও আমাদেরই বহন করতে হবে ।বহন করতেও হচ্ছে ।উন্নত দেশের তুলনায় আমরা দরিদ্র থেকে আরো দরিদ্র হচ্ছি ,বাড়য়ে আমাদের বহন করতে হবে ।বহন করতে ও হচ্ছে ।উন্নত দেশের তুলনায় আমরা দরিদ্র থেকে আরো দরিদ্র হচ্ছি ,বাড়ছে আমাদের এই সংখ্যা,বেকারের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে হচ্ছে চার কোটি পৌনে চার কোটি ।আমরা কেন পেছনে পড়ে থাকবো ?আমরা কেন ওঠে দাঁড়াবো না ?দুঃখ –দারিদ্রের এই অনিঃশেষ প্রক্রিয়ার মধ্যে আমরা কতো নিষ্পেষিত হতে থাকবো ?আমরা বিজ্ঞান প্রযুক্তির উন্নতির যুগে ,পৃথিবীর এই সাফল্য ও সমৃদ্ধির যুগে এই দুর্দশা ও দুরবস্থা কেোন সম্মান বা গৌরবের বিষয় নয় ।উন্নতির জন্য চাই নিরলস শ্রম ও সাধনা ।সাধনা ও শিক্ষা ছাড়া উন্নতি সম্ভব নয ।আমরা উন্নতি চাই ।কিন্তু শ্রম ও সাধনার কথা ভুলে যাই ।‘কাটা হেরি ক্ষান্তি কেন কমল তুলেত /দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে ‘ এই সত্য আমরা প্রয়শই মনে রাখিনা ।ফলে উন্নতির স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায় ।তাই জীবনেক ,দেশ ও জাতিকে সফল ও সার্থক করে গড়ে তোলার জন্যে শ্রম –বিমুখতা পরিহার করতে হবে ।
উপসংহার : ‘পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি ।,শ্রমের গৌরব ঘোষণা আজ দিকে দিকে ।একমাএ শ্রমশক্তির মাধ্যমেই জীবনে অর্জিত হয় কাঙ্ক্ষিত সাফল্য ,স্থিতি ও পরিপূর্ণতা ।নিরলস শ্রমসাধনায় সাফল্য অর্জন করে জীবজগতের মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠত্বের আসন দখল করেছে ।সুতরাং জীবনকে সুষ্ঠু স্বাভাবিকভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে শ্রম ব্যতীত অন্য কোনো সহজ পথ নেই ।আর তাই শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ব্যক্তিগত তথা জাতিগতভাবে প্রয়োজন ।কবি অক্ষয়কুমার বাড়লে তাঁর ‘মানব-বন্দনায় ’সভ্যতার শুরু থেকে বর্তমান পযন্ত শ্রমশীল ব্যক্তির উদ্দেশে বন্দনা করেছেন –
‘নহি আমি প্রতিজনে ,আদ্বিজ –চন্ডাল ,/প্রভু,ক্রীতদাস !
নমি কৃষি –তন্তুজীবী,স্থপতি ,তক্ষক ,/কর্ম,চর্মকার!’
শ্রমের মর্যাদা রচনা
ভূমিকা : মানবসভ্যতার সকল সৃষ্টির মূলেই রয়েছে শ্রম ।আজকের সভ্যতা যুগ-যুগান্তরের অগণিত মানুষের নিরলস শ্রমের ফসল ।জীবনধারণের তাগিদেই মানুষ কর্মব্যস্ত ।গুহাবাসী মানুষ একমাএ শ্রমের মাধ্যমেই বর্তমানের এ উন্নত সভ্যতার জন্ম দিয়েছে ।কৃষকের ফসল উৎপাদন ,শিল্পীর শিল্পকর্ম ,জ্ঞানীর জ্ঞানার্জন ,বিজ্ঞানীর নব নব আবিষ্কার সবই শ্রমলদ্ধ ফসল ।মানবজীবনের সবক্ষেত্রেই যা কিছু দৃশ্যমান তার সবই পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জত হয়েছে ।
শ্রমের কাযকারিতা : জন্মগতভাবেই মানুষ কিছু না কিছু সুপ্ত প্রতিভার অধিকারী ।আর এ সুপ্ প্রতিভার বিকাশ একমাএ শ্রমের মাধ্যমেই সম্ভব ।মানুষ নিজেই তার ভাগ্যনির্মাতা ।পরিশ্রমের মাধ্যমেই মানুষ নিজের ভাগ্য গড়ে তোলে ।ইতিহাসলদ্ধে জ্ঞান থেকে আমরা দেখতে পাই ,যে সকল মানুষ পৃথিবীতে স্মরনীয় –বরণীয় তাঁদের সাধনাই ছির পরিশ্রম ।তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের সাফল্যেই মানবসভ্যতা সমৃদ্ধ হয়েছে ।উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় ,তাঁদের উন্নতি পরিশ্রমেরই অবদান ।যে জাতি শ্রমকে মূল্য দিতে পেরেছে সে জাতিই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে ।কঠোর পরিশ্রমই তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের মহিমা দিযেছে ।
শ্রমের গুরুত্ব : মানবজীবন ও মানবসভ্যতার উন্নতির জন্য শ্রম অপরিহায উপাদান ।মানুষের জন্ন তার নিজের অধীন নয় ,কিন্তু নিজের অধীন ।কারণ কর্মই পারে মানুষকে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌছে দিতে ।শ্রমের মাধ্যমেই মানুষ জীবন সংগ্রামে জয়ী হতে পারে ।অনেক প্রতিকুল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে মানুষকে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয় ।এসব ক্ষেত্রে পরিশ্রমেই তার একমাএ হাতিয়ার ।তাই ব্যক্তিজীবনে এবং সমাজে শ্রমের যথাযথ মযাদা ও স্বীকৃতি দিতে হবে ।সামাজিক প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী প্রতিটি স্তরের শ্রমেই সমান গুরুত্বপূর্ণ ।কৃষক ,মজুর ,শিক্ষক ,ডাক্তার ,শিল্পী ,বিজ্ঞানী ,রাষ্ট্রনায়ক প্রত্যেকের যথাযথ পরিশ্রমই সমাজ ও দেশের অগ্রগতি সাধন করে ।শ্রমই মানুষকে সৃজনশীর করে ।নব নব সৃজনের মাধ্যমে মানুষ নতুন অগ্রগতি সাধন করে ।আজকের দিনের মানুষের শ্রমসাধিত কর্ম আগামী দিনের মানুষকে নতুন কর্মে উজ্জীবিত করে ।এককথায়, মানুষকে যথাযত মযাদায় প্রতিষ্ঠিত করা এবং কাল থেকে কালান্তরে অমর করে রাখার একমাএ উপায় শ্রম ।শ্রমবিমুখ ব্যক্তি মৃত্যুর সাথে সাথেই পৃথিবীর বুক থেকে হারিযে যায় ।অন্যথায় শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধঅশীল মানুষ ইতিহাসের পাতায় বেঁে থাকে চিরদিন ।নতুন নতুন আবিষ্কারে শ্রম :বিজ্ঞানীরা আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপএ আবিষ্কার করে জীবনকে রেছেন সহজ ও গতিশীল ।দুর্গমকে করেছেন সুগম ।অজানাকে সবার কাছে করেছেন পরিচিত ।অজয়কে করেছেন জয় ।আর এগুলোর সবকিছুই শ্রমের ফলাফল ।শ্রম ব্যতীত কোনো কিছু আবিষ্কার করা সম্ভব নয় ।বিজ্ঞানী নিউটন ,আইনস্টাইন ,স্টিফেন হকিংস দিনরাত নিরলস শ্রমের ফলেই এত গুরুত্বপূর্ণ সবকিছু আবিষ্কার করতে পেয়েছেন ।বিশ্বকিবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিরলস শ্রমের মাধ্যমেই তাঁর সাহিত্যসম্ভারকে জগদ্বিখ্যাত করেছেন ।কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমেই ।তাই নতুন কিছু আবিষ্কারে শ্রমের বিকল্প নেই ।
উন্নত জাতি গঠনে শ্রমের গুরুত্ব : পৃথিবীতে যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমেী সে জাতি তত বেশি উন্নত ।১৯৪৫ সালে জাজানে প্রথম পারমাণবিক বোমা আঘাত হানার পর বিশ্ব মনে করেছিল-জাপান আর বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না ।কিন্তু মাএ কয়েক দশকের মধ্যে জাপান আবার উন্নত জাতিতে পরিণত হয়েছিল ।অর্থনীতিতে দ্রুত সক্ষম হতে পেরেছিল ,যার বাস্তব উদাহরণ ৬০ এর দশকে অলিস্পিকের মতো বড় টুর্নামেন্রে আয়োজক দেশ হওয়া ।আর এমন দেশ হতে পেরেছিল জাপানিদের নিরলস শ্রমের কারণে ।পৃথিবীতে অলস জাতি কখনো উন্নত হতে পারেণি ।আজ ইউরোজ ,আমেরিকা উন্নত জাতিতে পরিণত হয়েছে শুধু নিরলস শ্যমের মাধ্যমেই ।
মানসিক ও শারীরিক শ্রম : সকল কাজের সাফল্য প্রাপ্তির জন ্য মানসিক ও শারীরিক পরিশ্রমের ভূমিকা অনস্বিকায ।মানসিক পরিশ্রম মানসিক উন্নতি দান করে এবং নবসৃষ্টির নবচিন্তার জন্ম দেয় ।আর মানসিক শ্রম যে কাজের চিন্তা করে ,শারীরিক শ্যম তা সম্পাদন করে ।কিন্তু কাযত আমরা দেখি,মানসিক পরিশ্রমের মযাদা মানুষ স্বীকার করলেও শারিরিক পরিশ্রমকে অনেকেই অবজ্ঞার চোখে দেখে ।ফলে সামাজিক ক্ষেত্রে দেখা যায় ,শিক্ষক ,দার্শনিক ,বিজ্ঞানী,চিকিৎসক ,রাজনীতিবিদ,অর্থনীতিবিদ প্রমুখ পেশাজীবী মানুষের অবস্তান সমাজের উপরতলায় ।অন্যদিকে কুলি-মজুর –কৃষক –শ্রমিক এদের অবস্থান সমাজের নীচুতলায় ।অন্নহীন ,বস্তহীন ,শিক্ষাহীন মানবেতর জীবনই তাদের নিতসঙ্গি ।যদিও শারীরিক শ্রম সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভের উপায় ,আত্নসম্মানের পরিপন্থী নয় ।প্রতিটি মানুষই দেশ ও জাতির কল্যাণ করার উদ্দেশ্যে নিজ যোগ্যতা অনুসারে মানসিক কিংবা শারীরিক শ্রমকে অবলম্বন করছে ।এদের অবদান স্বীকার করে কাজি নজরুল ইসলাম বলেছেন –
‘গাহি তাহাদের গান-
ধরনীর হাতে দিল যারা আনি’ফসলের ফরমান ।
শ্রমকিণাঙ্ক –কঠিন দেয় ডালি ভরে ফুলে ফুলে ।’
ব্যক্তিজীবনে শ্রমের গুরুত্ব : সামাজিক মযাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে হলে প্রত্যেক ব্যক্তিকেই শারীরিক ও মানুসিক শ্রমকে সমান মূল্য দেওয়া উচিত ।অন্যথায় জীবনে নেমে আসে ঘোর অমানিশা ।সমষ্টিগত জীবনকে সুন্দর ও মহিমাময় করতে শ্রমের গুরুত্ব অনস্বিকায ।কিন্তু ব্যক্তিজীবনে শ্রমের গুরুত্ব আরও আলবার্ট আইনস্টাইন ,ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ,মক্সিম গোর্কি ,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ ব্যক্তির জীবন থেকেও আমরা একই শিক্ষা গ্রহণ করি ।শ্রমবিমুখতা ব্যক্তিকে ব্যর্থতার গ্লানিতে পযবসিত করে ,তার অগ্রগতির পথকে করে রুদ্ধ ।তাই ব্যক্তিজীবনের সাফল্য শ্রমেরই সাফল্য ।
সভ্যতা বিকাশে শ্রম : মানবসভ্যতার বুনিয়াদ তৈরি করেছে শ্রম ।মানুষ যদি নিষ্কর্মা হয়ে ভাগ্যের হাতে আত্নসম্পর্ণ করে বসে থাকত তাহলে আমাদের সামনে এ সমুন্নত সভ্যতার বিকাশ হতো না ।শ্রমের শক্তিতেই মানুষ নতুন নতুন সামাজ্রে্ার পওন করেছে ,করেছেসভ্যতার ক্রমবিস্তার ।শ্রম ব্যক্তিজীবনকে সমৃদ্ধ ও ঐশ্বযশালী করে তারই প্রভাব পড়ে ,সমাজজীবনের ওপর ।তাই শুধূ ব্যক্তিজীবনের বিকাশ নয় ,সভ্যতার বিকাশেও শ্রমই হাতিয়ার ।যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী সে জাতি তত বেশি উন্নত ।রাশিয়া ,চীন ,আমেরিকা ,জার্মানি ,জাপান প্রভৃতি দেশ শ্রমের প্রকিয়াতেই এত বেশি উন্নত ।যুগ যুগ ধরে মানুষের কঠোর শ্রমই পৃথিবীকে বাসযোগ্য করেছ ,সভ্যতাকে করেছে সমৃদ্ধ ।একবিংশ শতাব্দীর উন্নত ও প্রগতিশীল সভ্যতাও মানুষের নিরলস শ্রমের ফসল ।
উপসংহার : পৃথিবীর সৃষি।ট থেকে বর্তমানু পযন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রমের অবদান অপরিসীম ।ব্যক্তিজীবনে থেকে জাতীয় জীবনের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য একমাএ শ্রমশক্তির মাধ্যমেই সম্ভব ।তাই দেশের জন্য ,সমাজের জন্য অবস্থান ও দক্ষতা অনুযায়ী যে পরিশ্রমই করা হোক না কেন তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে ।সব শ্রেণির শ্রমকে যদি সমান মযাদা দেওয়া হয় তবেই দেশ ও জাতির যথার্থ কল্যাণ সাধিত হবে ।পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে শ্রমের এবং শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও মযাদা স্বীকৃত ।আমাদের দেশের উন্নতিও এ মূল্যবোধেল মাধ্যমে সম্ভব ।
শ্রমের মর্যাদা রচনা
ভূমিকা : জীবন মানেই শ্রম ; আর শ্রম মানেই কর্মের ফসল ।তাই জীবনে বেঁচে থাকতে হলে প্রচুর শ্রম দিতে হয় ।বিনিময়ে আসে অর্থ –সম্পদ ,ভালো পদমযাদা ইত্যাদি ।জীবন মানেই বেঁচে থাকা জন্যেই খাদ্য গ্রহণ দরকার ।কিন্তু খাবার এমনি সংগ্রহ হয় নান ।তার জন্য প্রচুর পরিশ্রম করতে হয় ।কৃষক পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জমি চায় করে বলে জমিতে ধান ,গম,আলু ,শস্য ,পেয়াজ –রসুন ইত্যাদি নানা জাতের ফসল উৎপন্ন হয় ।আর তা খেয়েই মানুষ জীবন ধারণ করে ।জেলেরা নদীতে জাল ফেলার পরিশ্রম করে বলে আমরা মাছ খাওয়ার সুযোগ পাই ।কৃষক –মজুর ,জেলে –শ্রমিক যে শ্রম করে –সে শ্রমকেই শারীরিক বা কয়িক শ্রম বলে ।লেখক ,সাংবাদিক ,বৈজ্ঞানিক যে শ্রম করে তা মানসিক শ্রম ।মানসিক শ্রমের ফসল হিসেবে নতুন নতুন জিনিসের উদ্বাবন ঘটে ।কিন্তু সেই উদ্ভাবিত –আবিষ্কৃত জিনিসটির বাস্তবায়ন ঘটে দৈহিক বা শারীরিক শ্রমের মাধ্যমে ।যেমন একজন স্থপতি তার মানসিক শ্রম দিয়ে একটি বিরাট অট্রালিকার পরিকল্পনা ও নকশা প্রণায়ন করেন ।শ্রমিকরা কায়িক শ্রম দিয়ে তা নির্মাণ করে ।অতএব মানসিক ও শারীরিক উভয় প্রকার শ্রমই গুরুত্বপূর্ণ ।
পাশ্চাত্যে শ্রমের গুরুত্ব : উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যায়,পাশ্চাত্যে অর্থাৎ ইউরোপ-আমেরিকায় সব রকম শ্রমের গুরুত্বই সমান ।সেখানকার স্কুল –কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাএ-ছাএীরা তাদের অবসর সময় ঘর পরিষ্কার ,হোটেল বা দোকানে বয় বা সেলসম্যানের মতো ছোট কাজকে ও ঘৃণার বিষয় মনে করে না ।যে কোনো উচ্চপদস্থ কর্মচারী বা অভিজাত ব্যক্তি নিজ বাড়িতে বা বাসায় সব ধরনের কাজ নিজর হাতে করেন ।সে দেশের মানুষ কুলি –মজুর ,মুচ মেথরের কাজকে ঘৃণা বা অবজ্ঞার চোখে দেখে না ।সকাল থেকে রাত পযন্ত তারা কারখানা ,অফিস –আাদালত সর্বএই কঠোর পরিশ্রম করে ।তাই পাশ্চাত্যের দেশগুলো শিল্প –বাণিজ্য ,অর্থ –বিজ্ঞান সবদিক দিয়েই প্রচু উন্নতি লাভ করেছ ।
বাঙালির শ্রমবিমুখতা : মধ্যবিও বাঙালি শিক্ষিত সমাজ কায়িক পরিশ্রমকে অবহেলার চোখে দেখে ।কেউ কেউ ভয়ও করে ।যারা কায়িক পরিশ্রমের মা্ধ্যমে অন্ন –বস্ত –বাসস্থানের যোগান দেয় ,শিক্ষিত সমাজ তাদের অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখে ।ফলে সুদীর্ঘকাল ধরে এদেশের শ্রমজীবী মানুষ সমাজের উচ্চপদস্থদের দ্বারা অবহেলিত হচ্ছে ।আমাদের শিক্ষিত সমাজের শ্রমবিমুখতা সম্পর্কে একটি মজার গল্প প্রচলিত আছে ।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর একবার স্টেশনে গিয়ে দেখতে পেলেন ,ট্রেন থেকে নেমে এক যুবক কুলি খোঁজ করছে ।বিদ্যাসাগর তার কাছে গিয়ে কুলি খোঁজার কারণ জানতে চাইলে যুবক হাতের ছোট্র একটা ব্যাগ দেখিয়ে তা বহনের জন্য কুলির প্রয়োজন কথা বলে ।নিতান্ত ছোট এবং হালকা ব্যাগটি ঈশ্বরচন্দ্র নিজেই কুলি সেজে বহন করে নেন ।পরে যুবক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পরিচয় পেয়ে ক্ষমাপ্রার্থি হয় ।বিদ্যাসাগর তাকে বললেন –‘‘নিজের কাজ নিজে করাই উওম ,শ্রমে কোনো অগৌরব নাই ।’’
শ্রম এবং উন্নয়ন : ব্যক্তি জীবনে হোক আর জাতীয় জীবনে হোক ,শ্রম ছাড়া উন্নয়ন অসম্ভব ।উন্নয়নের জন্যে শ্রমের কোনো বিকল্প নেই ।শ্রমই মানুষকে সঠিক উন্নয়ণের সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যায় ।তাই যে কোনো উন্নতির পথে শ্রমের কোনো বিকল্প নেই।
শ্রম বিভাগ :শ্রম দুই প্রকার- কায়িক ও মানসিক ।উভয় প্রকার শ্রমই সুফল দান করে ।জগতের সুখ –শান্তি ,ঐশ্বয ,সম্মান –প্রতিপওি বলতে গেলে সবই এ শ্রমের ওপর নির্ভর করে ।বৈজ্ঞানিক ,দার্শনিক ,সাহিত্যিক ,চিকিৎসাবিদ ,রাজনীতিবিদ ,অর্থনীতিবিদ ,সমাজতও্ব ও শিল্পীর পরিশ্রম প্যধানত মানসিক ।তবে তাদের এ মানসিক শ্রমকে বাস্তবে রুপায়িত করতে তাঁরা সবাই কায়িক শ্রমেও অংশগ্রহণ করেন ।বাঁধাধরা কড়াকড়ি নিয়মের মধ্যে না হলেও তাদের কায়িক শ্রম অনুল্লেখ্য নয় ।একজন আইনস্টাইনকে হয়ত সারাদিন গবেষণাগারেই কাটিয়ে দিতে হয় ।একজন রবীন্দ্রনাথকে কল্পনার কথা অধিকাংশ সময়ই রাত জেগে লিখতে হয় ।একজন ধার্শনিককে অসম্বব পড়াশুনা করতে হয় এবং তার চিন্তা ধারাকে লিপিবদ্ধ করতে হয় ।একজন রাজনৈতিক নেতা তার চিন্তাধারাকে রূপায়িত করতে যেয়ে দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তে ছুটে বেড়ান ,জেল খাটেন ,প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের হাতে নিযাতিতি হন ।এভাবে দীর্গদিনের পরীক্ষায় জনগণের কাছে তিনি গ্রহণীয় হন ।একজন শিল্পীকে কখনো কখনো কঠিন পাথর কেটে শিল্পকর্ম করতে হয় ।একজন বু্দ্ধিজীবীকে প্রচুর পড়াশুনা করতে হয় ,অতীত ও বর্তমানের রাজনীতি ও সমাজনীতি ,শাসন পদ্ধতি সম্পর্কে সজ্ঞাত থাকতে হয় ।জনসাধারণকে সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা ও সঠিক পথ নির্দেশদানের জন্য জনতার চিন্তাধারাকে সূএাকার লিপিবদ্ধ করতে হয় ।তাকেও আমরা প্রধানভাবে মানসিক এবং কিছুটা কায়িক শ্রমে নিয়োজিত থাকতে দেখি ।একজন ব্যবসায়ী ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে মানসিক শ্রম দেন যেমন ,তেমন কায়িক শ্রমের ছাপও রাখেন ।তবে একথা সত্য ,এরা কেউ বাঁধাধরা সময়সীমা ,নিয়মমাফিক কায়িক শ্রমে অংশ নেন না ।যারা নেন তারা শ্রমজীবী জনসাধারণ ।এরা কুলি ,মজুর শ্রমিক ,চর্ককার ,কর্মকার গাড়ি চালক ,ট্রাক ড্রাইভার ক্ষেত মজুর ,মাঝি ,নাইটগার্ড ,পিয়ন ,মুচি মেথর এবং রিক্সাওয়ালা ।নয়টা –পাঁচটা বা সাতটা –দুটোর কেরানীদের শ্রমও কায়িক শ্রমের মধ্যেই ফেলা যেতে পারে ।সাধারণত উল্লিখিত কায়িক শ্রমে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কোনো উদ্ভাবনী ক্ষমতার পরিচয় দিতে পারে না ।এতে মানসিক কাজের আনন্দ নেই ,আছে যন্তের মতো কায়িক শ্রম দানের ক্ষমতা ।আর্থিক ও সামাজিক পদসযাদা এদের কম ; কিন্তু সভ্যতার ভিওি গড়ে উঠেছে এদেরই রক্তে –ঘামে –শ্রমে ।ধণিক শ্রেণি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছে এদেরই শ্রমে ।খন্দকার মোঃ ইলিয়াস এর ভায়ায় ,‘‘শ্রমিকের শ্রম মানব সভ্যতার জনক ।
’’ শ্রমকে তাই ভালবাসে শ্রমিক ।আজকের দিনে যে ভয় তাদের সে ভয় শ্রমের নয় ,সে ভয় তাদের নতুন “ Slave trade”এর ।
যার ইভাল্যুশনে জন্ম নিয়েছে ধনিকের নতুন শোষণ ।শ্বেতাঙ্গ ধনিক ও তাদের অনুচরেরা আজ অস্ত মানুষ চুরি করে বেচে না ,আমেরিকা ,জাপান রাশিয়া ,চীন ,যুগোশ্লাভিয়া ,পোল্যান্ড শ্রমকে মযাদা দিয়েছে সর্বোচ্চ ।দীর্ঘকাল পূর্বে ব্রিটিশ অর্থ বিজ্ঞানী পরলোকগত হ্যারল্ড লাস্কি একবার রাশিয়অ ঘুরে এসে লিখলেন –Law and justice in soviet Russia নামে একটি গ্রন্থ ।রাশিয়ার সব আইন আর বিচারের মূল ভিওি হচ্ছে ‘Work is the basis of self respect’ অর্থাৎ কর্মই আত্নামযাদার মূল বুনিয়াদ ।তাই সেখানে আসামীকে কঠোর দন্ড না দিয়ে দিয়েছেন কাজ –The prisoner must work for wages at task similar in character to those of normal industry (Lasky)’’ তাদের বিশ্বাস –“The prisoner must live a full and self respecting life.’’কোনো আইন বা বিচারেই এর চেয়ে মহওর আদর্শ আর হতে পারে না ।শ্রমের মযাদা এনে দিচ্ছে আত্নমযাদা ।
শ্রমের গুরুত্ব : আমাদের দেশের শিক্ষিত সমাজের শ্রমবিমুখতা গরীবের ‘ঘোড়ারোগ’ বলেই বিবেচিত হওয়া উচিত ।কেননা এ কারণেই আমাদের জাতীয় উন্নতি বিঘ্নিত হচ্ছে ।সকল জ্ঞানী গ-গুণি মনীষীই শ্রমকে অনেক গুরুত্ব দিযেছেন ।সব শ্রমই মূল্যবান এবং শ্রমিক মাএই সম্মানিত ।আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে ,লক্ষ লক্ষ মানুষের শ্রমের বিনিময়েই অন্ধকার থেকে আলোর মাঝে মানব –সভ্যতার উওরণ ঘটেছে ।
উপসংহার : যে জাতি যত পরিশ্রমী সে জাতি তত উন্নত ।আজকের জাপান এর সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ ।অতএব ব্যক্তি জীবনে উন্নতি করতে হলে শ্রম ও তার মযাদা দিতে হবে ।