শৃঙ্খলাবোধ রচনা বা নিয়মানুবর্তিতা প্রবন্ধ রচনা – snigdhasokal.com
শৃঙ্খলাবোধ রচনা বা নিয়মানুবর্তিতা প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা: ‘
যে সামাজে শৃঙ্কলা আছে ,ঐক্যের বিধান আছে,
সকলের স্বতন্ত স্থান ও অধিকার আছে,
সেই সমাজেই পরকে আপন করিয়া লওয়া সহজ ।’
জগৎ শৃঙ্খলার জালে বাঁধা ,নিয়মের জালে আটকানো ।অনু থেকে অট্রালিকা পযন্ত ,এই মহাবিশ্বে যা কিছু দৃশ্যমান এবং অদৃশ্য সবকিছুই একটি বিশেষ সজ্জায় সাজানো ,একটি বিশেষ শৃঙ্খলে বাঁধা ।এই সজ্জা বা শৃঙ্খলাই নিয়ম ।এ বিশ্বজগৎ নিয়মের অধীন ।সবকিছুতেই নিয়ম মেনে চলতে হয় ।এই যে কথা বলছি,লেখা পড়ছি-এখানেও রয়েছে নিয়মের শৃঙ্খলা ,ধ্বনির শৃঙ্খলা ।দু চোখ ভরে যা দেখছি তাতেও নিয়মের শৃঙ্খলা ।নিয়ম বা শৃঙ্খলার বাইরে যাওয়ার আমাদের কোনো উপায় নেই ।বস্তুত পার্থিবজীবনে যখন যা করার নিয়ম বা বিধি রয়েছে তা ঠিক সময়ে পালন করার নামই নিয়মানুবর্তিতা ।জন্ন থেকে শুরু করে মৃত্যু পযন্ত এই পৃথিবির সব কাজে –খাদ্য ,বস্ত ,অন্ন ,বাসস্থান চিকিৎসা –প্রতিট ক্ষেত্রেই নিয়ম –শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয় ।সুতরাং নিয়মানুবর্তিতা মানবজীবনের একটি অনিবায আবশ্যকতা ।Nepleon বলেছেন ,Discipline is the keystone tosuccess which is compulsory to follow to balance the systems .’
নিয়মানুবর্তিতার বৈশিষ্ট্য: পৃথিবীর সর্বএই নিয়মের রাজত্ব ।প্রকৃতির কোথাও অনিয়ম নেই ।জীবনের প্রতিক্ষেত্রেই নিয়মানুবর্তিতা লক্ষ করা যায় ।আকাশের চন্দ্র ,সূয ,গ্রহ ,নক্ষএ –সবকিছু একটা নির্দিষ্ট নিয়মে আবর্তিত হচ্ছে ।যথানিয়মে আকাশে সূয ওঠে ,চাঁদ ওঠে ,চাঁদ হাসে ।শীত ,গ্রীষ্ম ,বর্ষা ,শরৎ যথানিয়মে আসে ।নদ-নদী,পশু –পাখি ,বৃক্ষরাজি- সকলের মধ্যেই নিয়মের পালা চলছে ।প্রাণিজগতেও এ নিয়ম বিরাজমান ।পাখিরা সকালে জেগে কলগান করে,রাতে বিশ্রাম নেয় ।মৌমাছি,পিপীলিকা প্রভৃতি ক্ষুদ্র প্রাণিদের মাঝেও নিয়মের ব্যতিক্রম দেখা যায় না ।সৌরজগতের সামান্যতম ব্যতিক্রমের অর্থই হলো অনিবায মহাপ্রলয়,সৃষ্টির অন্তিম প্রহর –ঘোষণা ।প্রকৃতির এই নিয়মের রাত্বেই অদৃশ্য বন্ধনে বাঁধা মানুষের জীবন ও অস্তিত্ব ।শৃঙ্খলার এই বন্ধন ছিড়ে গেলে মানুষের জীবনে নেমে আসে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলতা ।মানুষ তাই প্রকৃতির কাছ থেকেই শৃঙ্খলার শিক্ষা নিয়েছে ।এই শৃঙ্খলা যেন মানুষের জীবনের চলার চন্দ্র ।সে ছন্দ ব্যক্তি জীবনকে শান্ত,সুস্থির ,চিন্তাশীল ও সফল করে তোলে ।যথার্থ নিয়মশৃঙ্খলার মধ্য দিয়েই বিকশিত হয় মানুষের ব্যক্তিত্ব ,মনুষষ্যত্ব ,মনুষ্যত্ব ও প্রতিবা ।একজন মানুষ যত মেধা ও প্রতিভা নিয়েই জন্মগ্রহণ করুক না কেন তার জীবন ও কর্মসাধনায় সে যদি সুশৃঙ্খল না হয় তবে তার জীবনে নেমে আসে নৈরাজ্য অন্দকার ।জীবন হয় অসফল ।
নিয়মানুবর্তিতার প্রয়োজনীয়তা: M.K.Gandhi বলেছেন ,`DisCiplene maintains systems,Systems maintnain development ,Development vibrates human life ,So disciplins must be followed .’জীবনের সর্স্তরেই নিয়মানুবর্তিতার প্রয়োজন রয়েছে ।মানুষ সামাজিক জীব ।সমাজবদ্ধ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে নিয়মানুবর্তিতা না থাকলে পরিবারের বিশৃঙ্খলতা অনিবায হয়ে ওঠ ।এজন্যে শৃঙ্খলাবোধ আত্নস্থ করার জন্যে অবশ্যই কতিপয় পারিবারিক ,সামাজিক রীতিনীতি অনুসরণ করা জুরুরি ।এ জন্যে পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের প্রতিটি মানুষের বড়দের শ্রদ্ধা ও ছোটেদের স্নেহ করা এবং সমাজের অন্যসব দায়দায়িত্ব সুশৃঙ্খলভাবে পালন করা কর্তব্য ।নাগরিক জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করার জন্য সুশৃঙ্খল জীবন-যাপনের কোনো বিকল্প নেই ।স্কুল –কলেজ ,অফিস-আদালত ,খেলার মাঠ ,কল-কারখানা ,হোটেল ইত্যাদিতে নিয়মানুবর্তিতার অভাবে দেখা দেয় চরম নৈরাজ্য ।খেলার মাঠে ও যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ম-শৃঙ্খলার প্রয়োজন গভীরভাবে অনুভূত হয়ে থাকে ।যে টিম ও যে সৈন্যদল শৃঙ্খলা রক্ষা করে না তাদের পরাজয় অনিবায ।বর্তমান সমাজে যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের একমাএ কারণ উচ্ছৃঙ্খলতা ।শৃঙ্খলার অভাবে পরিবার ,সমাজ ,স্কুল ,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজ করছে সন্তাস ।বস্তুত নিয়ম ছাড়া কোনো কাজই সুষ্ঠুভাবে যথাসময়ে সঠিক মান অক্ষুন্ণ রেখে সম্পন্ন করা যায় না ।তাই জীবনে নিয়মানুবর্তিতার গুরুত্ব অপরিসীম ।শৃঙ্খলার সিঁড়ি বেয়ে মানুষ আজকের দিনের এই সমাজ ও সভ্যতাকে গড়ে তুলছে ।পাশ্চাত্যের অনেক দেশ ও জাতির ঈর্ষণীয় সাফল্যের মূলে রয়েছে তাদের জাতিগত সার্বিক শৃঙ্খলাবোধ ।এ জন্যে বলা হয় ,‘নিয়ামানুবর্তিতাই উন্নতির চাবিকাঠি ।’
সমাজে ও জাতীয় জীবনে নিয়মানুবর্তিতা: মানুষ সামাজিক জীব ।সমাজে চলতে হলে তাকে সমাজের কিছু নিয়ম –কানুন বা বিধি –নিষেধ অবশ্যিই মেনে চলতে হয় ।সেসব নিয়মগ-কানুন মেনে না চললে সমাজজীবন হয়ে ওঠে দুর্সিহ ।তাই সমাজ –সভ্যতার অগ্রগতির কথা ভেবেই মানুষকে সামাজিক শৃঙ্খলার অনুসরণ করতে হয় ।বস্তুত মানুষ নিয়মের অধীন ।অস্তিত্বের মানুষ সামগ্রিক সমাজচেতনায় উদুদ্ধ হয় ।কেননা ,মানুষ যত বেশি ব্যক্তিকেন্দ্রিক ,তত বেশি সে নিয়মাভঙ্গকারী ।তাই বলে স্বাভাবিক জীবনযাএার ছন্দে সৈন্যবাহিনীর নিয়মানুবর্তিতা কারো কাম্য নয় ।জীবন-বিকাশের জন্যে তাকে আরো নানান উপকরণ –বৈচিত্র্যে সুন্দরতম করার জন্যে যে নিয়মানুবর্তিতা অপরিহায ,তাই তার কাম্য ।সামাজিক জীবনের সমৃদ্ধি নির্ভরশীল ।ইতিহাসের সেই রক্তক্ষরা যুগেও চলতে হয় ।সে সব আইন মেনে চলার মাঝে জাতীয় জীবনের সমৃদ্ধি নির্ভরশীল ।ইতিহাসের সেই রক্তক্ষরা যুগেও যেমন গ্রিক –রোমানরা নিয়মের অনুসরণ করে মানব-ইতিহাসের এক নবতর অধ্যায় রচনা করেছিল ,তেমনি আধুনিক কালেও অনেকে এই জোরে জ্ঞান-বিজ্ঞানের আসরে বিশ্বের অন্যতম পথিকৃৎ ।মানবসভ্যতার কী বিস্ময়কর অগ্রগতি ।শৃঙ্খলাবোধই জীবনগঠনের বোধমন্ত ।এ্ই মন্তাচ্চারণেই মানুষ নতুন নতুন আবিষ্কারে মেতে ওঠে ।জলে,স্থলে চলে নিরন্তর অভিযান ।
প্রকৃতিতে নিয়মানুবর্তিতা: মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির যে সম্পর্ক তাতেও রয়েছে নিয়ম,যা ভঙ্গ করলে তার পরিণাম কত ভয়াবহ হতে পারে,তা গ্রিনহাউস ইফেক্ট ,ওজোনস্তরের ক্ষয় ,পরিবেশ ধ্বংস ,বন –উজাড়,অনাবৃষ্টি বা অতিবৃষ্টি ,ভূমিধস ,ভূমিক্ষয় ইত্যাদি বিপযয়ের দিকে তাকালে সহজেই অনুমান করা যায় ।তাই প্রকৃতির সন্তান হিসেবে মানুষ তার নিজ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে ।সভ্যতার শুরু থেকে প্রতিকুল প্রাকৃতিক পরিবেশের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শৃঙ্খলার নানা অদৃশ্য বন্ধন তৈরি করেই মানুষ তার শেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে ,গড়ে তুলেছে বিস্ময়কর সমাজ সভ্যতা ।
নিয়মানুশীলনের প্রস্তুতিকাল: মানুষের শৈশব হলো নিয়মানুশীলনের এক মাহেন্দ্রক্ষণ ।এই শুভ লগ্নেই শুরু হয় নিয়মের ব্রতানুষ্ঠান ।এরই ওপর নির্ভর করে তার ভাবী জীবনের সফল –প্রতিষ্ঠা ।জীবন শুরুর এই প্রস্তুতি পর্ব তাই গভীর ও ব্যাপক ।গুরুত্ব সীমাহীন ।সামান্য এুটি-বিচ্যুতিতে এর পরিণাম ভয়াবহ। হতাশার –হাহাকারে ,ব্যর্থতায় –গ্লানিতে সে- জীবন নিত্য কুণ্ঠিত ।যেমন ব্যক্তি-জীবনে ,তেমনি সমাজ-জীবনেও তারই প্রতিচ্ছায়া ।
ছাএজীবনে নিয়মানুবর্তিতা: ছাএজীবন নিয়মানুবর্তিতার একটি প্রকৃষ্ট প্রয়োগক্ষেএ এবং উপযুক্ত সময় ।ছাএজীবনের সঠিক পথ নির্ধারিত হয় শৃঙ্খলাবোধের মধ্যে দিয়ে ।‘Work While you work ,play while yoy play .And that is the way to be happy and gou.’এ নিয়ম ছাএদেরে মেনে চলতে হবে ।সুপরিকল্পিত এবং সুসামঞ্জস্য আসতে বাধ্য ।নিয়ম মেনে চলতে হবে-পাঠ-দানে,পাঠ –গ্রহণে ,অধ্যায়নে ,তথা শিক্ষাঙ্গনের সার্বিক কাঙ্ক্ষিত সফলতা যে ছাত্রের জীবন শৈশব থেকেই নিয়মের ছকে ঢেলে সাজিয়ে গড়া হয় ,তার ভবিষৎ তার অনুগামী না হঢে পারে না ।কিন্তু জীবনের েএই পযায়েই যদি নিয়ম-ভঙ্গের মরণ –যজ্ঞ চলতে থাকে,তাহলে তার জন্যে গোটা সমাজকেই চরম মাশুল দিতে হয় ।ছাএসমাজের সাম্প্রতিক কিছু কিছু নিয়মভঙ্গের কারণে গোটা জাতির মাথা –ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।ছাএজীবনে ভবিষ্যতেরেই এক বিশেষ অধ্যায় মাএ ।পরবর্তী জীবনে ছাএই দায়িত্বশীল নাগরিক ।তাই ছাএসমাজের কাছে আজও এই নিয়মানুশীলন এক মহৎ কর্তব্য ।জীবনের গঠন পর্বে শৃঙ্খলাবোধেল বীজ আবাদ করলেই জীবনে একসময় সোনা ফলে ।শৃঙ্খলাবোধ তাই যুগে যুগে কালে কালে ছাএজীবনের অপরিহায আচরণীয় বিধি হিসেবে গণ্য হয়েছে ।
বর্তমান উচ্ছৃঙ্খলতা ও ছাএসমাজ: সম্প্রতি আমাদের জাতীয় জীবনে নানা কারণে চুড়ান্ত বিশৃঙ্খলতা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে ।বর্তমান আমাদের নিয়মানুবর্তিতার পরিবর্তে অরাজকতার উন্নাদনাই বেশি করে চোখে পড়ে ।কলে-কারখানায় ,অফিসে –আদালত ,স্কুলে –কলেজে ,খেলার মাঠে,ঘরে-বাইরে সর্েএই নিয়মানুগত্যের অভাব প্রকট ।অবৈধ প্রভাব খটিয়ে স্বার্থান্বেষী মানুষ মেতে উঠেছে ক্ষমতাধর হওয়ার প্রতিযোগিতায় কল্যাণমুখী রাজনীতি হয়ে পড়েছে কলুষিত ।সমাজজীবেনের রন্দ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির থাবা বিস্তৃত হচ্ছে ।তার ফল হয়েছে ভয়াবহ ।শিক্ষার ক্ষেত্রে ,সমাজ-জীবনের অলিতে –গলিতে উচ্চৃঙ্খলতার বয়াবয় কলঙ্ক –স্বাক্ষর ।সামান্য কারণেই চলে ভাঙচুর ।চলে খুনখারাবি ,রাহজানি ,সন্তাস ,চলে শ্লীলতাহান ।সামাজিক স্বার্থ ভুলে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জঘন্য প্রবণতার ফলে সমাজকে আজ গ্রাস করেছে চরম বিশৃঙ্খলতা ও নৈরাজ্য ।জাতীয় জীবনের অপমৃত্যুর এ এক ঘন্টাধ্বনি ।বর্তমান ছাএসমাজের উচ্ছৃঙ্খলাতর কথা বলতে গেলে তা হবে খুবই দুঃকের ও বেদনার ।যেখানে তাদের ওপরই নির্ভর করে দেশ ও জাতির গৌরব ,সেখানের আজ তারা নানা কারণে রুদ্ধ ।হতাশা আর নৈরাশ্য এই যুব-শক্তিকে এক সর্বনাশ্য অন্ধকারের দিকে টেনে নিয়ে চলেছে। দেশব্যাপী নৈরাজ্য ,তীব্র অর্থনৈতিক সংকট ,চরম দারিদ্র্য ,ধনবৈষম্য ,মূল্যবোধের অবনতি ,কুনীতি-দুর্নীতিভরা রাজনীতি ইত্যাদি বহু কারনে ছাএসমাজকে নিয়মহীনতার দিকে চুম্বক –আকর্ষণে নিয়ত টেনে নিয়ে যায় ।এই নৈরাজ্য ও উচ্ছৃঙ্খলতার হাত থেকে আমাদের অবশ্যেই মুক্তি পেতে হবে ।এ জন্য জাতীয় জীবনের সর্বএ চাই সার্বিক শৃঙ্খলাই হচ্ছে জাতীয় জীবনের সুষমাময় সৌন্দয ।কেবল একটি সুশৃঙ্খল সমাজই নিশ্চিত করতে পারে জাতীয় জীবনে উন্নতি ও অগ্রগতি ।অশিষ্ট আচরণ ,দুর্বিনীত আস্ফালন,অন্যায় জবরদস্তি ,অবৈধ পেশিশক্তি দিয়ে জাতিকে কখনো এগিয়ে নেয়া যায় না ।জাতির উন্নয়ন আর সার্বিক অগ্রগতির ভিওি হচ্ছে ব্যক্তির শৃঙ্খলাবোধ ।ব্যক্তির সৃশৃঙ্খল জীবনচরণের শক্তিতেই জাতি বিশ্বসভায় মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে ।আমাদের এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে ,স্বাধীনতা অর্জন করা কঠিন ,স্বাধীনতা রক্ষা করা আরো কঠিন ।আজ বিশ্বের দিকে দিকে উৎকর্ষসাধনের প্রতিযোগিতা ।এক্ষেত্রে আমাদেরও গ্রহণ করতে হবে নিয়মানুবর্তী হওয়ার প্রতিজ্ঞা ।
নিয়মানুবর্তিতা ব্যক্তি স্বাধীনতার অন্তরায় নয়: অনেকেই এমনটি ধারণা করে থাকেন যে ,কঠোর নিয়মানুবর্তিতা ব্যক্তি-স্বাধীনতার পরিপন্থী বা বিরোধী ।আসলে এ ধারণা আদৌ সত্য নয় ,বরং নিয়ম মানার মাধ্যমে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং অপরের অধিকারকেও স্বীকার করে নেয়া হয় ।নিয়মানুবর্তিতা ব্যক্তির স্বাভাবিক বিকাশকে সুন্দর ও সুগম করে ।অন্যদিকে ,অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতার বিকাশ ঘটায় ।এতে করে জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ ও দুঃখশয় ।তািই বলা যায় ,নিয়মানুবর্তিতা কখনো ব্যক্তি-স্বাধীনতার পরিপন্থী নয় ,বরং সহায়ক ।
নিয়মানুবর্তিার ফলাফল: জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তিতা ভালো ফলাফলের প্রতীক হিসেবে কাজ করে ।সেনাবাহিনীতে নিয়ম-শৃঙ্খলা কঠিনভাবে পালন করা হয় ।সে জন্যে তারা এত কর্মঠ ,বলিষ্ঠ ও কর্তব্যপরায়ণ ।নিয়মিত কাজ করলে অত্যন্ত কঠিন কাজও সহজ হয়ে পড়ে ।বিশ্বের মনীষীরাও জীবনে কঠোরভাবে নিয়মানুবর্তিতার অনুশীলন করে গেছেন ।তাঁদের সাফল্যের মূলে ছিল শৃঙ্খলাবোধ ।
নিয়মানুবর্তিতা ভঙ্গের পরিণতি: নিয়ম –ভঙ্গের পরিণতি কখনো ভালো হয় না ।ব্যক্তিজীবনে ,সমাজজীবনে কিংবা জাতীয় জীবনে যে কোনো নিয়মের হেরফেল হলে অনিবাযভাবে নেমে আসে বিপযয় ।নিয়মানুবর্তিতা –ভঙ্গের ফলাফল যে অনিবায বিপযয় –তার বহু নজির ইতিহাসে রয়েছে ।ইতিহাসের নজির হিসেবে বলা যেতে পারে ,হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নির্দেশ অমান্য করে মুসলিম বাহিনী ‘ওহুদের যুদ্ধে’বিশৃঙ্খলাভাবে শএুর ওপর আক্রমণে চালাতে গিয়ে ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হয়েছিল ।নিয়মানুবর্তিতার অভাবে অনেক প্রতিভাবান মানুষকে ও জীবনে ব্যর্থতার গ্লানিকে বরণ করতে হয়েছে ।মূল কথা হচ্ছে ,সার্থক –জীবনের জন্যে নিয়মানুবর্তিার বিকল্প নেই ।
উপসংহার: ইতিহাস পযালোচনা করলে দেখা যায় ,যে জাতি যত বেশি নিয়ম –শৃঙ্খলার অধীন সে জাতি তত বেশি উন্নত ।তাই ব্যক্তি তথা জাতীয় জীবনে উন্নতির জন্যে সর্বস্তরে কঠোরভাবে নিয়মানুবর্তিতার অনুশীলন করা বাঞ্ছনীয় ।এই নিয়মানুবর্তিতাই জাতির অগ্রগতি ,জাতির জাগ্রত চেতনা ,জাতির উন্নয়ন আর সার্বিক অগ্রগতির ভিওি ।
শৃঙ্খলাবোধ রচনা বা নিয়মানুবর্তিতা প্রবন্ধ রচনা
বিশ্ব প্রকৃতিতে নিয়মানুবর্তিতা: নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারনের নামই নিয়মানুবর্তিতা ।নির্দিষ্ট সময়ের দূরত্বে দিনের পর রাত এবং রাতের পর দিন আসছে এবং রৃতুর পরিবর্তন ঘটছে ।নিয়মের মধ্যে আবহাওয়া পরিবর্তন হচ্ছে ।এসব পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীতে শস্য উৎপাদন হচ্ছে ।মহাবিশ্বের চন্দ্র ,সূয ,গ্রহ নক্ষএ সব নির্দিষ্ট নিয়ম –শৃঙ্খলা ও গতির মধ্যে সীমাবদ্ধ ।সবাই চলছে আপন আপন নিয়মে ।সব কিছুই বাঁধা নিয়মে হচ্ছে বলে এসব সম্ভব হয় ।যখন কোনো কারণে এসব নিয়ম অঙ্ঘিত হয়,তখনই নানা প্রাকৃতিক বিপযয় দেখা দেয় ।
নিয়মানুবর্তিতা ও জীবনের গতি: জীবন বয়ে চলে সম্মুখ গতিতে ।পেছনে ফিরে যাবার কোনো পথ খোলা নেই ।কেবলেই সামনে চলা ।আজ যে দিনটি চলে গেল ,তা আর কোনোদিনই ফিরে আসবে না ।তাই জীবনের এ গতিতে যদি শৃঙ্খলা বা নিয়মানুবর্তিতা না থাকে ,তাহলে জীবন সুন্দর ও সার্থক হয় না ।জীবেনে সামনে চলার ছন্দ আসে না ।জীবনকে কেমন যেন এলোমেলো মনে হয় ;জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ ।
নিয়ম-শৃঙ্খলার প্রয়োজনীয়তা: মানব জীবনে নিয়ম-শৃঙ্খলার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম ।একটি জাতির উন্নতির মূলে রয়েছে শৃঙ্খলাবোধ ।শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা ছাড়া কোনো কাজই সঠিকভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয় ।তাই জীবনের সকল ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা রক্ষা করা একান্ত কর্তব্য ।
ব্যক্তি জীবনে নিয়মানুবর্তিতা: ব্যক্তি জীবনে নিয়ম –শৃঙ্খলার গুরুত্ব ও অপরিসীম ।উন্নত জীবনযাপনের জন্য শৃঙ্খলা বা নিয়মানুবর্তিতা অত্যন্ত প্রয়োজন ।স্বাস্থ্য রক্ষার নিয়ম না মানলে দেহ রোগাক্রান্ত হতে পারে ।নিয়ম কানুন মেনে চললে সব কাজে সফলতা আসে ,সুখ শান্তি বজায় থাকে ।
বিদ্যালয়ে নিয়ম-শৃঙ্খলা: বিদ্যালয়ে প্রত্যেক ছাএ-ছাএীকে বেশ কিছু নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয় ।যেমন ক্লানে শুরু হবার কিছু আগে ছাএ-ছাএীদের বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে হয় ।নির্ধারিত পোশাক পরে বিদ্যালয়ে আসতে হয় ।ছুটি গ্রহণ ব্যতীত নিজের ইচ্ছা মতো অনুপস্থিতে থাকা যায় না ।
ছাএ জীবনে নিয়ম-শৃঙ্খলা: মানব জীবনে শৃঙ্খলা বা নিয়মানুবর্তিতা একদিনে গড়ে ওঠে না ।ছাএ জীবনেই নিয়মানুবর্তিতা অনুশীলনের উপযুক্ত সময় ।প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠা ,নিয়মিত লেখাপড়া তৈরি করা ,প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসা ,সময়মত খেলাধুলা করা,এসবই নিয়ম শৃঙ্খলার অধীন ।যে ছাএ –ছাএী তার বিদ্যালয় জীবনে নিয়ম –শৃঙ্খলা মেনে চলে ,বড় হয়েও সে নিয়মানুবর্তী হয় ।তাই ছাএজীবনেই নিয়মানুবর্তিতা শিক্ষা করা উচিত ।
নিয়মানুবর্তিতা শেখার ক্ষেএ ও সময়: নিয়মানুবর্তিতা শেখার উপযুক্ত ক্ষেএ হচ্ছে পরিবার ।শিশুকাল থেকেই সন্তানদেরকে নিয়মিত প্রতিটি কাজে অভ্যস্ত করে তোলা অভিভাকের অপরিহায কর্তব্য ।কারণ একদিনে নিয়মানুবর্তিতা শেখা যায় না ।সকালে সময়মত ঘুম থেকে উঠা ,হাত মুখ ধোয়া,পড়তে বসা ,নাশতা করা ,স্কুলে যাওয়া,খেলাধূলা ইত্যাদি প্রত্যেক কাজ নিয়মমত করা দরকার ।
উপসংহার: বিশ্বে যে জাতি যত বেশি সুশৃঙ্খল ,সে জাতি তত বেশি সমৃদ্ধ ।নিয়মানুবর্তিতা ব্যক্তি,সমাজ ও জাতীয় জীবনে সফলতা আনে ।শৃঙ্খলা –নিয়মানুবর্তিতা না থাকলে জীবন ও জগতের ধ্বংস অনিবায ।আমাদের জীবনের সার্বিক উন্নতির জন্য শৃঙ্খলা তথা নিয়মানুবর্তিতার কোনো বিকল্প নেই ।