শীতের সকাল রচনা (Shiter Sokal Rachana) for class 5,7,8,9,10 , jsc ssc, hsc
শীতের সকাল রচনা (Shiter Sokal Rachana) for class 5,7,8,9,10 , jsc ssc, hsc
শীতের সকাল
অথবা,
শীতের একটি সকাল
সূচনা:শীতের ঋতু। স্কুলে নতুন ভর্তি পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। ২ জানুয়ারি হতে ৬ দিনের জন্য স্কুল বন্ধ থাকবে। ভাবলাম, এ কয়দিনের জন্য দাদার বাড়ি বেড়িয়ে এলে মন্দ হয় না। শীতের দিনে দাদার বাড়ি খুবই উপভোগ্য।
দাদার বাড়িতে শীতের সকাল: আমার দাদার বাড়ি ফেনী জেলায়। গ্রামের বাড়িতে দাদা দাদি থাকেন। আমার ছোট চাচা এখনো গ্রামেই পড়াশোনা করেন। তিনি দশম শ্রেণির ছাত্র আর আমি নবম শ্রেণিতে উঠেছি। আমাকে পেয়ে চাচার কী যে আনন্দ! আমাকে কোথায় নিয়ে যাবেন, কী দেখাবেন, এসব অন্তহীন চিন্তা তার মাথায়! নিজে নিজেই পরিকল্পনা তৈরি করে মুরব্বির মতো। ঠিক করলেন, দাদার বন্দুক নিয়ে দূরের বিলটাতে পাখি শিকারে যাবেন। ভোর পাঁচটায় রওয়ানা দিতে হবে। রাতের মধ্যেই চাচা প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা সেরে নিলেন। বাড়ির দুটো কাজের ছেলে সাথে যাবে। অন্য বাড়ির এক দাদা হবেন আমাদের শিকার উপদেষ্টা। দাদা একেবারে পাক্কা শিকারি। উড়ন্ত পাখি শিকারেও তিনি সিদ্ধহস্ত। ফজরের সুমধর আযান আর পাখির কিচিরমিচিরে আমাদের ঘুম ভাঙল। ঠিক সময় আমরা দাদার সাথে নমায এবং অন্য কাজগুলো তাড়াড়ড়ি সেরে নিলাম। যথাসময়ে আমরা পাঁচ জন রওয়ানা হয়ে গেলাম। গাছের পাতা থেকে রাত শেষের কুয়াশা ঝরে পড়ছে। রাস্তার ঘাসগুলো ভিজে আছে শিশিরে। দূরের গ্রামগুলো কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। সামান্য দূরে কেবল পথ দেখা যায়। কখনো চাচার পাশাপাশি আবার কখনো পেছনে পেছনে পথ চলছি। অজানা এক উত্তেজনায় শরীর উত্তপ্ত হয়ে উঠল। মনে তখন আনন্দ আর ধরে না। হাঁটতে হাঁটতে দাদা আমাদের তাঁর অনেক অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন। একবার শিবচর বালুচরে শিকার করতে গিয়ে পাখি শিকার না করে কিভাবে এক বিরাটকায় কুমির শিকার করলেন, সে কাহিনীও শোনাতে ভোলেননি। সে এক লোমহর্ষক কাহিনী বটে। দাদার শিকার পারঙ্গমতা আর অসীম বিরত্বে মনে মনে খুশি হলাম। এরই মধ্যে বিলের একেবারে কাছাকাছি এসে গেছি। দাদার কন্ঠস্বরে কী পরিবর্তন। চেহারায় দৃঢ়তা, হাতে বন্দুক, ইশারায় কথাবার্তা। নিচু হয়ে সন্তর্পণে পা ফেলা শুরু করলেন তিনি। বিল থেকে একটু দূরে থাকতেই দাদা চাচার কানে ফিসফিস করে কিছু বলে আমাদের গতি বন্ধ করে দিয়ে বেশ একটু ঘুরে একটা উচু আড়াল থেকে পজিশন নেন। চাচা আমাকে বিলের দিকে ইশারা করলেন দেখলাম, বিলের পনি কালো করে অনেক পাখি বেড়াচ্ছে। আমার দেখা শেষ না হতেই দাদার বন্দুক হতে দ্রিম্ দ্রিম্ শব্দ বের হয়ে এলো। বিল এলাকার নিস্তব্ধতা ভেঙে এক কম্পনের সৃষ্টি হলো। অজানা এক ভয় আর উত্তেজনায় আমার শরীরটা ক্ষণিকের জন্য কেঁপে উঠল। আমি চাচার গা ঘেঁষে দাঁড়ালাম। চাচা কাজের ছেলে দুটোসহ মুহূর্তের মধ্যে পানিতে ঝাঁপ দিলেন। দেখলাম বেশ কিছু পাখি ডানা ঝাপটে পালিয়ে যাওয়ার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে। নীরবতা ভেঙে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠল। সবে মিলে প্রায় এক বোঝা সুন্দর পাখি নিয়ে আমার সামনে হাজির। চক্চকে মসৃণ পালক পাখির গায়ে বাংলাদেশর বালিহাঁস। কী চমৎকার পাখি!
কুয়াশা ভেঙে সূর্য অনেক ওপরে উঠে এসেছে। এবার বাড়ি ফেরার পালা। স্পষ্ট দেখতে পেলাম, কে যেন রাস্তার ঘাসগুলোর ওপর হীরকের টুকরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে। ভোরের আলোয় শিশির বিন্দুগুলো ঝলমলিয়ে উঠেছে। খালি পায়ের ভিজা ঘাসের ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পায়ের পাতা অবশ হয়ে আসছিল, কিন্তু তবু এভাবেই চলতে ইচ্ছা হলো। মাঝে মাঝে হিমেল এসে গায়ে কাঁটার মতো আঘাত হেনে যায়, গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। শরীর আর মনে জাগিয়ে তোলে এক লাজুক শিহরণ। ক্রমে সূরযের আলোয় কুয়াশার ঘোর কেটে যাচ্ছে। দূরের গ্রামগুলো কী সুন্দর, স্বচ্ছ দেখাচ্ছে! ফিরে এলাম দাদা বাড়িতে।
উপসংহার:বাংলাদেশের সমাজ প্রকৃতিতে শীত ঋতু আনন্দায়ক। অবশ্য এ ঋতুতে বস্ত্রহীন মানুষদের অনেক কষ্ট হয়। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে নয়ত যারা মোটামুটি মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ, এ ঋতু তাদের পরিবারে ভিন্ন একটা আনন্দের আমেজ নিয়ে আসে। পিঠা পুলি, পায়েশ আর খেজুর রসের তৈরি বিবিধ উপায়ে খাদ্যদ্রব্যে রসনা তৃপ্ত হয়।