যুক্তফ্রন্ট কি ? যুক্তফ্রন্ট গঠন, নির্বাচন ও সরকার | ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা
যুক্তফ্রন্টের প্রধান তিন নেতা:
১. মাওলানা ভাসানী।
২. শেরে বাংলা একে ফজলুল হক
৩. হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী
যুক্তফ্রন্ট গঠন, নির্বাচন ও সরকারঃ
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর শাসক দল মুসলিম লীদ দীর্ঘদিন নির্বাচনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার গঠনের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এছাড়া প্রাদেশিক সরকার নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের টালবাহানা পূর্ব বাংলার জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠে। পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে মুসলিম লীগের শোচনীয় পরাজয় ঘটানোর লক্ষ্যে ১৯৫৩ সালে ১৪ ই আগস্ট নভেম্বরে আওয়ামীলীগ যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ২১ দফা প্রণয়ন শেষে ৪টি দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। দল ৪ টি হলো: আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম এবং গণতন্ত্রী দল। ১৯৫৪ সালে মার্চ মাসে প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । নির্বাচনে জনগণ যুক্তফ্রন্টের ২১-দফাকে তাদের স্বার্থ রক্ষার সনদ বলে বিবেচনা করে। পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদের ১৩৭ টি মুসলিম আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩ টি , মুসলিম লীদ মাত্র ৯ টি লাভ করে। বাকি আসন অ্ন্যরা পায়। এই নির্বাচনে পূর্ববাংলা জনগণ পাকিস্তানের রাষ্ট ক্ষমতায় পশ্চিম পাকিস্তানের কর্তৃত্ব ও প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়ার রায় প্রদান করে। পূর্ব বাংলায় বাঙালিদের শাসন দেখতে তার যে আগ্রহী, তা প্রকাশিত হয় । যুক্তফ্রন্ট প্রাদেশিক সরকার গঠনের রায় লাভ করে। জনগণই যে , সকল ক্ষমতার উৎস – এই নির্বাচন তা প্রমাণ করে। জনগণ এ নির্বাচনে মুসলিম লীগ কে প্রত্যাখ্যান করে এবং পূর্ব বাংলায় মুসলিম লীগের শাসনের অবসান ঘটায়।
আরো পড়ুন – শিক্ষা কি?
১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ২১ দফাঃ
- বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হবে।
- বিনা ক্ষতিপূরনে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ, সকর প্রকার মধ্যস্বত্ব ও সার্টিফিকেট প্রথা বাতির করা হবে।
- পাট ব্যবসাকে জাতীয়করণ, পাটের ন্যায্যমূল্য প্রদান এবং পাট কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
- সমবায় কৃষি ব্যবস্থার প্রবর্তন, কুটির ও হস্তশিল্পের উন্নতি সাধন করা হবে।
- পূর্ব বাংলার রবণ শিল্পের সম্প্রসারণ ও লবণ কেলেঙ্কোরির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
- বাস্তুহারাদের পনর্বাসন করা হবে।
- সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বন্যানিয়ন্ত্রণ ও দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা হবে।
- পূর্ব বাংলা েশিল্পায়িত ও শ্রমিকের ন্যায় সঙ্গত অধিকার রক্ষা করা হবে।
- অবৈতনিক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন করা হবে।শিক্ষকদের ন্যা সঙ্গত বেতন ও ভাতার ব্যবস্থা করা হবে।
- বাংলাকে শিক্ষার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হবে।
- ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনে ও সকল প্রকার কালাকানুন বাতিল করা।
- প্রশাসনিক ব্যায় সংকোচন, উচ্চ ও নিম্নবেতনভুক্ত কর্মচারীদের মধ্যে বেতন বৈষম্য হ্রাস করা হবে।
- সকল প্রকার দুর্নীতি নির্মূল করা হবে।
- র াজবন্দিদের মুক্তিদান, বাকস্বাধীনতা, সভাসমিতি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনাত নিশ্চিত করা হবে।
- শাসণ বিভাগ হতে বিচার বিভাগকে পৃথক করা হবে।
- বর্ধমান হউস’ কে আপাতত ছাত্রাবাস ও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণাগার করা হবে।
- বাংলা ভাষার শহিদদের স্বরণে শহিদ মিনার নির্মাণ করা হবে।
- একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস ও সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করা হবে।
- ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী পূর্ব বাংলার পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হবে।
- নিয়মিত ও অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে।
- পরপর তিনটি উপনির্বাচনের যুক্তফ্রন্ট পরাজিত হলে মন্ত্রিসভা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবে।