মহাকাব্য কাকে বলে? মহাকাব্যের শ্রেণিবিভাগ – snigdhasokal.com

 মহাকাব্য কাকে বলে?

মহাকাব্যঃ যে তন্ময় কাব্য বস্তুপ্রধান ঘটনা বিন্যাসের প্রকাশক, যাতে যুদ্ধসজ্জায় তূর্যনিনাদ ঝঙ্কারিত হয় , এমন ধীর গম্ভীর প্রশান্ত সমুন্নত মহত্ত্বব্যঞ্জক কাব্য যা ভাষার ওজোগুণের তেজস্বী ও গাম্ভীর্যব্যঞ্জক তাকে মহাকাব্য বলে। মহাকাব্য সাধারণত বীররসাত্মক আখ্যান কাব্য। এ কাব্য ক্লাসিকিধর্মী। কাহিনী, গঠন, ভাষা ও ছন্দ মিলিয়ে মহাকাব্য বিরাটতত্ত্বের জন্ম দেয়। মহকাব্যকে সংজ্ঞায়  আবদ্ধ করা কঠিন। তদপুরি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে  এরে কিছুটা ভিন্ন।
আরো পড়ুনঃ সনেট কাকে বলে?

মহাকাব্যের প্রাচ্য দেশীয় সংজ্ঞাঃ

প্রাচ্যের মহাকাব্যে অষ্টাধিক সর্গ থাকে। পুরাসর্গ একই ছন্দে রচিত কিন্তু সর্গশেষে  ছন্দের পরিবর্তন হয়। বিষয়ানুযায়ী কর্গের নামকরণ হয়। আশীর্বাদ, নমস্কার, বস্তু নির্দেশ মহাকাব্যের আরম্ভ, পুরাণ, ইতিহাস এর উপজীব্য। নায়ক ধীরোত্তম, সদ্বংশজা, ক্ষত্রিয় দবতা্ পটভূমি মর্ত পাতাল প্রসারী, ‍যুদ্ধ, নগর, সমুদ্র ও প্রকৃতির বর্ণায় ভরপুর। শৃঙ্গার, বীর শান্ত  যে কোন একটি রস প্রধান, অন রস অঙ্গস্বরূপ । পরিণতিতে নায়কের জয়।

মহাকাব্যের পাশ্চাত্য সংজ্ঞাঃ

পাশ্চাত্য মহাকাব্যে বীরত্বব্যঞ্জক উপাখ্রান, সর্গ সংখ্যার সুস্পষ্ট নির্দেশ নেই। একই ছন্দে সর্গ রচিত। জাতীয় জীবনের ঐতিহাসিকবা পৌরাণিক বিষয় অবলম্বনে করে রচিত। নায়ক দেবতা না হলেও ক্ষমতাশীল, মহৎ গুণসম্পন্ন বীর হবে। মূল কাহিনীর সাথে শাখা কাহিনী থাকতে পারে, কাহিনীতে নাটকীয়তা থাকবে। বীর রস প্রধান হবে। পরিবেশের নায়কের জয় হবেই এমন কোনো কথা নেই।
মহাকাব্য মূলত বস্তুনিষ্ঠ, আদি;-মধ্য-অন্ত সমন্বিত বর্ণনাত্মক কাব্য। মহাকাব্যের অনুপ্রেরণা অধিকাংশ সময়ই ঐশী শক্তি। এতে মানব, দানব ও দেবদেবীর চরিত্রের সমাবেশ ও প্রয়োজনবোধে অতিলৌকিক স্পর্শও থাকতে পারে। মহাকাব্যে জটিল ঘটনাবর্তের সৃষ্টি এবং বহুবিধ চরিত্রের সমাবেশ সন্নিবেশ থাকলেও সমগ্র কাব্যটিতে একটি অখণ্ড শিল্প সৌনাদর্যেবোধ ও মহত্ত্বব্যঞ্জক গাম্ভীর্য থাকবে। মহাকাব্যের ভাষা প্রসাদগুণসম্পন্ন, ওজস্বী ও অনুপ্রাস, উপমা প্রভৃতি অলঙ্কারবহুল। মূলত  ঐশী প্রেরণা অনুপ্রাণিত নানা সর্গে বা পরিচ্ছেদে বিভক্ত যে কাব্যে কোনো সুমহান বিষয়বস্তুকে অবলম্বন করে এক বা বহু বীরোচিত চরিত্র বা অতিলৌকিক শক্তি সম্পাদিত কোনো নিয়তি নির্ধারিত ঘটনা ওজস্বী ছন্দে বর্ণিত হলে তাকে মহাকাব্য বলে।
আরো পড়ুনঃ সমাস কাকে বলে?

মহাকাব্যের প্রকারভেদঃ

মহাকাব্য দুই প্রকার যথা 
  • জাত মহাকাব্য
  • সাহিত্যিক মহাকাব্য
আরো পড়ুনঃ কারক কাকে বলে?

জাত মহাকাবঃ

যে মহাকাব্য বিশেষ কোনো কবির রচিত নয়; অর্থাৎ যে মহাকাব্যের ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখ, আশা- আকাঙ্ক্ষা প্রকাশের সুযোগ থাকে না, বরং কোনো জাতীয় জীবনের, জাতির সহস্র বছরের হৃদপিণ্ডের স্পন্দন অনুভূত হয় তাকে জাত মহাকাব্য বলে। জাত মহাকাব্যে এক টি সমাজ বা রষ্ট্রের র্যথবদ্ধ জীবনপ্রণালী, মানব-মানবীরর আচার- আচরন, বিশ্বাস, প্রেম, সংগ্রাম বিন্যস্ত হয়। নির্দ্দিষ্ট সময়খন্ডের পরিবর্তে একটি সামাজের  অতীত বর্তমানের দীর্ঘ সময়সীমা জাত মহকাব্যে অনুসৃত হয় । ব্যক্তি বিশেষ রচনা করলেও জাত মহাকাব্যে সামাজিক ঘটনা পরিক্রমা ও জীবনের অনুসৃত হয়।
বাল্মীকি রচিত রামায়ণ ও কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসকৃত ‘মহাভারতের ঘটনা বিষয়বস্তু ও চরিত্রের বেচিত্র ভারতবর্ষে র আদিকালের গোটা সমাজ ব্যবস্থাকেই উন্মোচন করেছে। হোমার রচিত ইলিয়াড ও ওডেসি প্রাচী ন গ্রিসের যৌথ সমাজ ব্যবস্থা মহাকাব্যিক রূপ। ইলিয়াডে ট্রয়যুদ্ধের শেষ পর্যায়ের কাহিনী  অবলম্বিত হলেও দশ বছর ব্যাপ্ত যুদ্ধের সমগ্র ছবিই কবির গ্রন্থন নৈপুন্যে এত বিধৃত হয়েছে। ওডেসিতে ট্রয় যদ্ধের ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে যুদ্ধ  ইথাকা রাজ্যের জনজীবন নায়ক ওডেসিয়ূসের অবিশ্বাস্য ভ্রমণ ও সংগ্রাম এবং পেনিলোপির বিড়ম্বিত ভাগ্য জীবন। পৃথিবীতে রামায়ণ,  মহাভারত, ই লিয়াড ও ওডেসি এগুলো জাত মহাকাব্যের দৃষ্টান্ত।

সাহিত্যিক মহাকাব্যঃ

জাত মহাকাব্যের পৌরাণিক বা জাতীয় ঘটনাসূত্র অবলম্বনে কবির যুগমানস, সমাজমানস ও দৃষ্টিভঙ্গির সমবায় এক আধুনিক সৃষ্টি। এ ধরণের মহাকাব্যে লেখকের ব্যক্তিগত অনুভূতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ভার্জিলের ‘ঈনিদ’ , তাসোর ‘জেরুজালেম ডেলিভার্ড, দান্তের ‘ডিভাইড কমেডি, মিল্পনের ‘ প্যারাডাইস লস্ট, মূধূসূদনের ‘মেঘনাদবধ’ সাহিত্যিক মহাকাব্যের উদাহরণ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button