ভোগে সুখ নাই, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ ভাবসম্প্রসারণ

 ভোগে সুখ নাই, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ ।

ভোগে সুখ নাই, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ ভাবসম্প্রসারণ


মূলভাব : ত্যগকরতে না পারলে ভোগ করে আনন্দ পাওয়া যায় না ।

সম্প্রসারিত ভাব : স্বার্থলোলুপতা, ভোগাকাঙ্ক্ষা বা আত্নসুখ-পরায়ণতা মনুষ্যত্বের পরিপন্থী । যে ব্যক্তি শুধু নিজের স্বার্থচিন্তায় তৎপর, নিজের ভোগবিলাসে নিমজ্জিত ,জগৎ ও জীবনের বৃহওর অঙ্গন থেকে সে স্বেচ্ছানির্বাসিত, জগদবাসীর ভালোমন্দ, সুখদুঃখ, মঙ্গল-অমঙ্গল তার হৃদয়মনকে স্পর্শ করে  না,এ পৃথিবীর আলো আঁধার তার মানসরাজ্যে কোনোরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় না ।বিরাট এ জগৎ সংসারের কল্যাণ-অকল্যাণ সম্পর্কে যে একান্ত নিলিপ্ত ও উদাসীন, তার মানবজনম বৃথা । তার বেঁছে থাকা না থাকা সমান ।কেননা জীবনের সার্থকতা তথা মনুষ্য জন্নের সফলতা কখনো স্বার্থপরতায় নিহিত নয় । মানুষের যে দুর্লভ গুণটি তাকে অপরাপর সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছে তা-ই মনুষ্যত্ব ।মনুষ্যত্বের সারকথা,জাগ্রত বিবেককে শুভ ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করা অপরাপর প্রাণীর প্রতি সহজাত মমত্ববোধ মানুষকে মহিমান্বিত ও সারকথা,জাগ্রত বিবেককে শুভ ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করা অপরাপর প্রাণীর প্রতি সহজাত মমত্ববোধ মানুষকে মহিমান্বিতও গৌরবানিত করে তোলে ।তাই মানুষকে হতে হয় পরসর্বস্ত ও অপরের হিতৈষী ।আত্নসুখ বিসর্জন দিয়ে পরের কল্যাণে নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে দেওয়ার মধ্যেই মনুষ্যত্ববোধের বিকাশ ঘটে । ভোগ মানুষকে অবসন্ন করে তার চিন্তাশক্তিকে ভোঁতা করে ও জীবনকে হীনতার অভিশাপপুষ্ট করে । আগুনে ঘি ঢাললে আগুন যেমন না নিভে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে, তেমনি ভোগবিলাসীর জীবনও নতুন থেকে নতুনতর ভোগের নেশায় সর্বদা বহুগুণ বেগে জ্বলতে থাকে । অথচ ত্যাগের মধ্যেই পরম শান্তি লাভ করা যায়, জীবনকে গৌরবানিত করে তোলা যায় । ত্যাগ মানুষের পরম লক্ষ্য হওয়া উচিত । ভোগীকে কেউ মনে রাখে না, মনে রাখে ত্যাগীকে ।

ভোগে সুখ নাই, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ ।

মূলভাব : অপরের মঙ্গলের আত্নততৃপ্তিই বড় সুখ ।

সম্প্রসারিত ভাব : ভোগের কোনো শেষ নেই, কোনো পরিতৃপ্তি নেই , যতই মানুষ ধনসম্পদ ভোগ করে ততই তার ভোগের ইচ্ছা বেড়ে যায় । ফলে প্রচুর ভোগের ব্যবস্থাও তার কাছে অতি সামান্য বলে মনে হয়  তাকে এমনভাবে জর্জরিত করতে থাকে, তার ধনসম্পদ যত বেশিই হোক তা তার কাছে অতি নগণ্য বলে প্রতীয়মান হয় । আরো বেশি পাবার আকাঙ্ক্ষা তার অন্তরে এক দুঃখানুভূতি জাগিয়ে রাখে । যা আছে তা ভোগ করে আনন্দ লাভ করতে তার আর প্রবৃওি থাকে না । যা নেই তা পাবার আকাঙ্ক্ষায় ব্যগ্র বাহু বাড়িয়ে সে শুধু দুঃখকেই আহ্বান করতে থাকে । অন্যদিকে প্রত্যেক মানুষেরই দেশের প্রতি ও সমাজের প্রতি অনেক দায়িত্ব ‍ু কর্তব্য রয়েছে । এ দায়িত্ব এত বেশি যে কখনো শেষ হয় না । সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য মানুষকে সৎ ও মহৎ করে তোলে এবং অন্তর অপার আনন্দে পরিপূর্ণ করে দেয় । দেশে ও সমাজে অসহায় নারী-পুরুষ ও জীব-জন্তু রয়েছে । তাদের সেবা করলে এবং তাদের বিপদে সা্হায্য করতে পারলে অজ্ঞাতে অন্তরে এক অনির্বচনীয় শান্তি ও সুখের ধারা বয়ে যায় । মানুষকে সব দুঃখ ভুলিয়ে দিয়ে তার প্রাণ বেহেশতের সুখ শান্তিতে ভরে দেয় ।অতএব ভোগে সুখ নেই, পরের মঙ্গলের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে পারলেই প্রকৃত সুখ পাওয়া যায় এবং জীবন সার্থক হয়

 ভোগে সুখ নাই, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ ।
 

ভাব সম্প্রসারণ : মনুষ্যত্বই মানুষের মহাপরিচালক । আর ত্যাগের মহিমাই পারে মানুষের এ মনুষ্যত্বে উৎকর্ষ     ও বিকাশ ঘটাতে । ত্যাগের মাধ্যমে সম্পদ চলে যায়, ফিরে আসে আনন্দ ,ভ্রতৃত্ব আর মনুষ্যত্ব । ত্যাগের মধ্যেই মানবজীবনের সার্থকতা, ত্যাগেই মানুষের একমাএ আদর্শ হওয়া উচিত ।

জগৎসৎসারে ভোগ ও ত্যাগ দুটি বিপরীতমুখী দিক । ভোগ ও ত্যাগের দরজা সবার জন্যেই উন্নুক্ত । মানুষ ভোগে আনন্দ পেলেও তৃপ্তি পায় না ।কিন্তু ত্যাগের মাধ্যমে আনন্দ ও তৃপ্তি দুটোই লাভ করা যায় । তাই ভোগ নয়,ত্যাগই জীবনের লক্ষ্য হওয়া বাঞ্ছনীয় । ত্যাগ মনুষ্যত্বকে বিকশিত করে । মনুষ্যত্বের কল্যাণেই মানুষ অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা এবং শ্রেষ্ট । শুধু মানুষ হিসেবে জন্ন নিলেই মনুষ্যত্ব লাভ করা যায় না। মানুষকে তার স্বীয় চেষ্টায় এ  মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে হয় ।মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটানোর মধ্যেই মানবজীবনের সার্থকতা নিহিত । ভোগের মাধ্যমে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে না । ভোগ মানুষকে জড়িয়ে ফেলে  পঙ্কিলতা , গ্লানি ও কালিমার সঙ্গে । তাদের অর্জিত সম্পদ নিজের স্বর্থ ব্যতীত সমাজের অন্যে কোনো কাজে আসে না । তাই, পরের দুঃখ তাদের হৃদয়-মনও কাঁদে না। তারা স্বার্থান্ধ ও সংকীর্ণচিও বলে সমাজে মযাদাহীন ।ত্যাগ মানুষকে নিয়ে যায় মনুষ্যত্বের উদার ভূমিতে । পরের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করার আদর্শ ও উদ্দেশ্য মনুষ্যত্বের মধ্যেই নিহিত থাকে ।মনুষ্যত্বের গুণে মানুষ নিজের স্বার্থের কথা ভুলে গিয়ে পরার্থে, দীনদুঃখীদের জন্যে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে আনন্দ পায় । স্বামী বিবেকানন্দ, মাদার তেরেসা প্রমুখ ব্যক্তির চরিএ ত্যাগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত । ত্যাগের মাধ্যমেই তাঁদের মনুষ্যত্ব তথা মানবিক গুণাবলি ফুটে উঠেছে । ভোগ ও সুভ নিয়ে মানুষের নানারকম ধারণা । সুখের জন্যে অনেকেই বিলাস – ব্যসনে মও হয়ে ওঠে এবং ভোগ-বিলাসের নানা উপকরণের আয়োজন করে । কিন্তু কোনোভাবেই ভোগাকীর্ণ জীবন সুখের সন্ধান দেয় না । কেননা ভোগেই যদি সুখের আকর হতো তবে বিও ও ক্ষমতাবানরাই  পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী বলে গণ্য হতেন । কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়,এাঁরাও জীবনে প্রকৃত সুখী হতে পারেন না ।একমাএ মহৎ কর্মের মধ্য দিয়েই সুখ পাওয়া যায় । দেশব্রতী, মানবব্রতী কর্মেই মানুষ লাভ করে জীবনের সার্থকতা । দেশের জন্যে মানবতার জন্যে যাঁরা আত্নত্যাগ করেন তাঁদের মতো সুখী আর কে আছে?বস্তুত পরের জন্যে স্বার্থ ত্যাগ করার মধ্যেই মানুষের মানবিক গুণাবলির শ্রেষ্ঠ প্রকাশ ।

এ জীবনের পরম শান্তি ‘দেবে আর নেবে মিলাবে মিলিবের মধ্যে নিহিত । যথার্থ সুখ পরিভোগ প্রবণতার মধ্যে পাওয়া যায় না, পাওয়া যায় নিরস্তর কাজের মধ্যে । দেশব্রতী ও মানব্রতী ভূমিকার মধ্যে ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button