বিশ্রাম কাজেরই অঙ্গ একসাথে গাঁথা ,/নয়নের অংশ যেন নয়নের পাতা ।ভাবসম্প্রসারণ
বিশ্রাম কাজেরই অঙ্গ একসাথে গাঁথা ,/নয়নের অংশ যেন নয়নের পাতা ।
কর্ম বা কাজই জীবন,কর্মের মধ্যেই মানুষ বেঁচে থাকে ।যে ব্যক্তি জীবনে যত বেশি কাজ করতে পারে তার সফলতা ও সুখ তত বেশি ।তবে এ কথা মনে রাখতে হবে যে,মানুষ শুধু কাজের খাতিরেই কাজ করে না ,মানুষ কাজ করে সুখের জন্যে ,শান্তির জন্যে ।সুতরাং সেই সুখকে অনুভব করার জন্যে তাকে পযাপ্ত বিশ্রাম নিতে হয় ।যেখানে কাজ আছে বিশ্রামকে সেখানে থাকতেই হবে ।চোখের পাতা যেমন চোখেরই অংশ তেমনি বিশ্রামও কাজের একটা অংশ ।চোখের কাজ দেখা ,কিন্তু চোখের পাতা সেই দেখার কাজ কখনো কখনো বন্ধ রেখে চোখকে অবসর দেয় ।এতে চোখকে আরো বেশি কাজ করার সুযোগ দেয়া হয় ।আমরা যদি কিছু সময় একটানা কাজ করি ,তবে আমাদের শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং কর্মক্ষমতা লোপ পায় ।তখন আমরা বিশ্রামের প্রয়োজন অনুভব করি ।কিছুক্ষণ বিশ্রাম করলে আমাদের ক্লান্তি দূর হয় ,মন প্রশান্ত হয় এবং আমাদের কর্মশক্তি ফিরে আসে ।আমরা তখন নতুন উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে কাজে আত্ননিয়োগ করতে সক্ষম হই ।এ জীবন কর্মময় ।জীবনযাপন ও জীবনযাপনের জন্যে কর্মসম্পাদান অপরিহায ।সেদিক থেকে বিচারে মানুষের জীবন কর্মচ্রকের অনিবায বন্ধনে আবদ্ধ ।সে বন্ধন থেকে মানুষের মুক্তি নেই ।কিন্তু বিরতিহীন কর্ম সম্পাদানে মানুষের জীবন হয় দুর্বিষহ ।তখন কর্মক্লান্ত মানুষের অন্তরাত্না আর্তনাদ করে ওঠে-‘সহেনা সহেনা আর জীবনের খন্ড খন্ড করি দন্ডে দন্ডে ক্ষয় ।’ সে জন্যে কর্মময় জীবনের ধূসর মরুভূমিতে ছায়াশীতল মরূদ্যানের মতো আবির্ভূত হয় বহুকাঙ্ক্ষিত অবকাশ ।কর্মবিরতির অমূল্য ছাড়পএ বহন করে সে নিয়ে আসে ছুটির নিমন্তন । এ অবসরে নতুন কর্মোদ্যমের প্রেরণা সৃষ্টি হতে থাকে দেহ ও মনে ।কর্মবিরতি তািই কর্মময় জীবন ও জগতের একমাএ চাবিকাঠি ।
চোখের পাতা দৃষ্টিকে অবরুদ্ধ করে না,বরং তাকে বিশ্রাম দিয়ে অবিরত দেখার ক্লান্তি থেকে মুক্তি দিয়েছে ।কাজ ও বিশ্রাম একে অপরের সঙ্গে জড়িত ।একটাকে বাদ দিয়ে অন্যটাকে ভাব যায় না ।কর্ম ও বিরতির সুষম ব্যবহারেই জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ ।
বিশ্রাম কাজেরই অঙ্গ একসাথে গাঁথা ,/নয়নের অংশ যেন নয়নের পাতা ।
ভাব সম্প্রসারণ :কর্মমুখর পৃথিবীতে সুন্দর জীবন গঠনের জন্যে পরিশ্রম এবং বিশ্রাম দুটোই অপরিহায ।বিশ্রাম এবং কাজ একই সুত্রে গ্রথিত একটা অপরটার পরিপূরক ।
ফুলের পাপড়ি ছুঁয়ে উড়ে বেড়ায় যে প্রজাপতি ,সে একসময় ডানা গুটিয়ে নিশ্চল হযে বসে থাকে ।অন্তহীন নীলিমায় অবাধ সঞ্চরমান বিহঙ্গ নেমে আসে মাটির বুকে ।যে মানুষটি মাথার গাম পায়ে পেলে গাঁইতি চালিয়ে পাথর ভাঙে,সেও হাতিয়ার ফেলে দু দন্ড জিরোয় ।এ যে ক্ষণিক বিরতি ,এ যে এতটুকু বিশ্রাম ,এ তো শুধু অবসাদের ক্লান্তি দূর করা নয় ,নতুন কর্ম প্রেরণায় ,নব উদ্যম উজ্জীবিত হয়ে পরবর্তী কাজের জন্য প্রস্তুত হওয়া ।কাজের ফাঁকে বিরাম বা বিশ্রামের সময়টুকুই হলো অবকাশ ।বিশ্রাম কাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ ।পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি, পরিশ্রম জীবনে আনে সমৃদ্দি ।আর বিশ্রাম আনে কাজে উদ্যম ,শক্তি ও প্রেরণা ।পরিশ্রমের পর শ্রান্ত ক্লান্ত দেহকে সুস্ত করে হৃত উদ্যম ফিরিয়ে আনার জন্য যেমন বিশ্রামের প্রয়োজন ,তেমনি বিশ্রামের পর দেহের কর্মস্পৃহাকে সচল সজীব রাখার জন্যে নিয়মিত শ্রমের প্রয়োজন ।দেহের পক্ষে একটানা পরিশ্রম যেমন ক্ষতিকর ,তেমনি একটানা বিশ্রামও সুখকর নয় ।একটানা বিশ্রাম জীবনকে করে তোলে অলস ,অচল ও কর্মবিমুখ ।পক্ষান্তরে ,একটানা পরিশ্রমের ফলে দেহ-মনে ভর করে অবসাদ ,লু্প্ত হয় দেহের কর্মক্ষমতা ।বিশ্রামের প্রয়োজনেই বিধাতা দিনের কর্মময় জীবনের পর রাত্রি দান করেছেন ।চোখের পাতা যেমন চোখের জন্যে অপরিহায অঙ্গ,তেমনি বিশ্রামও পরিশ্রমের জন্যে অপরিহায ।
কাজ ও বিশ্রাম পাশাপাশি একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ।একটানা কাজ অথবা একনাগাড়ে বিশ্রাম কোনোটাই জীবনের জন্যে কল্যাণকর নয় ।তাই কাজের পাশাপাশি বিশ্রাম ,বিশ্রামের পাশাপাশি কাজ অপরিহায ।
বিশ্রাম কাজেরই অঙ্গ একসাথে গাঁথা ,/নয়নের অংশ যেন নয়নের পাতা ।
সম্প্রসারিত ভাব : জীবনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যে বিশ্রামের প্রয়োজন ।মানুষ কখনো অনবরত কাজ করে চলতে পারে না ।কোনো যন্তের পক্ষেও তা সম্ভব নয় ।মানুষ বা যন্তের একটি নির্দিষ্ট কর্মক্ষমতা থাকে ।এর সঙ্গে বিশ্রামের সংযোগ আছে ।কাজ করতে করতে মানুষ যখন পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে তখন তার জন্য অবসর একান্তই আবশ্যক হয়ে পড়ে ।বিশ্রামের মাধ্যমে নতুনভাবে শক্তি সঞ্চয় করা যায় এবং কাজের ক্ষমতা বাড়ে ।ফলে আমরা তখন নতুন উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে কাজে আত্বনিযোগ করতে পারি ।এতে কাজের সফলতা অর্জনে সহায়ক হয় ।
ক্রমাগত কাজ করলে শক্তি লোপ পেতে থাকে এবং এক সময়ে তা একেবারে নিঃশিষেত হয়ে যায় ।যন্তের যান্তিকতার মধ্যে ও এ বিশ্রাম অবশ্যই প্রয়োজন ।প্রয়োজনীয় বিশ্রামের প্রয়োজনই আল্লাহ তায়ালা দিনের কর্মময় জীবনের পর রাতকে বিশ্রামের জন্যে রেখেছন ।চোখের বিশ্রামের জন্য যেমন চোখের পাতা ,তেমনি কাজের সঙ্গে বিশ্রাম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত রয়েছে ।তাই বিশ্রামের কাজের সহায়ক বলে মনে করা হয় ।