ব্যকরণ
বচন কাকে বলে? বচন কত প্রকার ও কি কি? bochon kake bole | snigdhasokal.com
বচন কাকে বলে?
বচন শব্দের অর্থ বাক্য বা কথা। কিন্তু ব্যাকরণের বচনের সাহায্যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ এক না একাধিক সে ধারণা প্রকাশ হ য়ে থাকে। বাংলায় বিশেষ্য ও সর্বনামের সংখ্যাগত ধারণা প্রকাশের উপায়কে বচন বলা হয়।
উদাহরণ:
একটি বালক রাস্তায় খেলা করছে।
দুটি বালক রাস্তায় খেলা করছে।
অনেক বালক রাস্তায় খেলা করছে।
আরো পড়ুনঃ চলিত ভাষা কাকে বলে?
উপরের বাক্য তিনটিতে প্রথম বাক্যে ‘একটি’ শব্দ দ্বারা একজন, দ্বিতীয় বাক্যে ‘দুটি’ শব্দ দ্বারা দু’জন এবং তৃতীয় বাক্যে ‘অনেক’ দ্বারা বেশি সংখ্যক বালককে বোঝানো হচ্ছে। এখানে ‘একটি’ , ‘দুটি’, ও অনেক এ শব্দগুলো দ্বারা সংখ্যার ধারণা পাওয়া যা্চ্ছে। আর সংখ্যার মাধ্যমেই বচন নির্ণয় করা যায়।
বচনের প্রকারভেদঃ
বাংলা ভাষায় বচন দু’প্রকার ।যথা –
যে শব্দ দ্বারা কোনো প্রাণী , ব্যক্তি বা বস্তুর একটি মাত্র সংখ্যার ধারণা লাভ হয়, তাকে একবচন বলে। যেমন- সে এল।
ছেলেটি স্কুলে যায়।
বহুবচন কাকে বলে?
যে শব্দ দ্বারা কোনো প্রাণী ব্যক্তি বা বস্তুর একের অধিক অর্থাৎ বহু সংখ্যার ধারণা লাভ হয়, তাকে বহুবচন বলে। যেমন:- তারা গেল। ছেলেরা েএখনো আসে নি।
একবচন প্রকাশের নিয়ম:
বাংলা ভাষায় একবচন গঠনের বিশেষ কোনো বিভক্তি নেই; শব্দ বা নামই একবচন প্রকাশ করে। একবচন প্রকাশের সাধারণ নিয়মগুলো হলো-
১. বাংলা ভাষায় শুধু টা, টি , খানা, খানি ইত্রাদি প্রত্যয় ( নির্দেশক ) দ্বারা িএকবচন বোঝায়। যেমন- মেয়েটি, কলমটা, শাড়িটা, বই খানা, টেবিলখানা ইত্যাদি।
২. শুধু- জল , মা, ঢাকা, ফুল ইত্যাদি প্রাতিপদিক দিয়েও একবচন প্রকাশ করা বা বোঝানো যায়। যেমন – মা আমার অমূল্য ধন। তুমি আর কতদিন ফেলবে চোখের জল? আমি ঢাকা যাব। তোমার জন্য ফুল আনব ইত্যাদি।
৩. বিভক্তি যোগ করেও একবচন প্রকাশ করা যায় । যেমন – বিদ্যালয়ে যাও। বেঞ্চে বস ইত্যাদি।
৪. এক শব্দযোগে একবচন বোঝানো যায় যেমন এ েতা একটি মাত্র বই । একজন করে বিদায় হও ইত্যাদি।
আরো পড়ুনঃ সমাস কাকে বলে?
বহুবচন প্রকাশের নিয়মঃ
বাংলা ভাষায় বহুবচন প্রকাশের জন্য কয়েকটি বিশেষ বিভক্তি এবং কতগুলো সমষ্টিবাচক শব্দ ব্যবহার হয্ যেমন – রা, এরা, গুলি , গুলো, সমূহ, রাশি, বর্গ, দল, বৃন্দ, মণ্ডলী, নিচয়, রাজি ইত্যাদ্
১. রা, এরা সাধারণত প্রাণিবাচক শব্দ ও প্রাণিধরম্ আরোপিত অপ্রাণিবাচক শব্দের কর্তৃকারকে এগুলোর প্রয়োগ হয়। যেমন – ছেলেরা , মেয়েরা, ঝিয়েরা, তারা, তোমরা ইত্যাদি।
২.গুলি, গুলা, গুলো – প্রাণী ও অপ্রাণিবাচক শব্দে সকল কারকেই প্রয়োগ হয়। যেমন – আমগুলি, মেয়েগুলো,, বইগুলো, গাছগুলি, লাঠিগুলি ইত্যাদি।
৩. গণ, সমূহ, বর্গ, বৃন্দ, – প্রাণিবাচক তৎসম শব্দে এগুলোর প্রয়োগ হয়। এগুলো সাধু ভাষায় বেশি ব্যবহার হয়।
যেমন – শিশুগণ, শিক্ষকবৃন্দ, বিদ্যালয়সমূহ, পরিবারবর্গ, শ্রোতাবৃন্দ ইত্যাদি।
৪. দিগ, দিগেরর, দিগে, দের – প্রাণিবাচক শব্দে ও যেসব শব্দে প্রাণিধর্ম আরোপিত হয়ে সেসব শব্দে কর্তৃকারক ছাড়া অন্যান্য কারকে এগুলোর প্রয়োগ হয়। যেমন – ছেলেদিগের, আমাদের, তাহাদিগকে ইত্যাদি।
৫. কুল, জন, মণ্ডলী, মহল- প্রানীবাচক শব্দে প্রয়োগ হয়। যেমন – মানবকুল, জ্ঞানীজন, দর্শকমণ্ডলী, রাজনৈতিক মহল ইত্যাদি।
৬. আবলি, নিচয়, মালা, মণ্ডল – অপ্রাণিবাচক শব্দে প্রয়োগ হয়। যেমন – গ্রণ্থাবলি, শব্দনিচয়, মেঘমালঅ, পর্বতমালঅ, বায়ুমণ্ডল ইত্যাদি।
৭. সকল, সব- প্রাণী ও অপ্রাণী সব শব্দেই প্রয়োগ হয়। যেমন – সকল মানুষ, পাখি সব, লোক সকল, সব কথা ্ইত্যাদ।
আরো পড়ুনঃ শব্দ কাকে বলে?
বিশেষ নিয়মে কিছু বহুবচন গঠনের নিয়মঃ
ক. বিশেষ্য শব্দের একবচনের ব্যবহারেও অনেক সময় বহুবচন বোঝানো হয়্ যেমন – সিংহ বনে থাকে। ( একবচন ও বহুবচন দু-ই বোঝায়) । পোকার আক্রমণে ফসল নষ্ট হয় ( বহুবচন) বাজারে লোক জমেছে ( বহুবচন ) । বাগানে ফুল ফুটেছে ( বহুবচন)
খ. একবচনাত্মক বিশেষ্যের আগে অজস্র, অনেক, বিস্তর, বহু, নানা, ঢের ইত্যাদি বহুত্ববোধক শব্দ বিশেষণ হিসেবে প্রয়োগ করেও বহুবচন বোঝোনো হয়। যেমন- অজস্র লোক, অনেক ছাত্র, বিস্তর টাকা, বহু মেহমান, নানা কথা , ঢের খরচ, অঢেল টাকা পয়সা ইত্যাদি।
গ. অনেক সময় বিশেষ্য ও বিশেষণ পদের দ্বিত্ব প্রয়োগও বহুবচন সাধিত হয়। যেমন – হাঁড়ি হাঁড়ি সন্দেশ। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। বড় বড় মাঠ। লাল লাল ফুল।
ঘ. বিশেষ নিয়মে সাধিত বহুবচন –
বহুবচন সর্বনাম ও বিশেষ্য প্রয়োগে – মেয়েরা কানাকানি করছে। এটাই করিমদের বাড়ি। রবীন্দনাথরা প্রতিদিন জন্মায় না। সকলে সব জানে না।
ঙ. কতিপয় বিদেশি শব্দে সে ভাষার অনুসরণে বহুবচন হয়। যেমন – আন যোগে : বুজুর্গ – বুজুর্গান, সাহেব, সাহেবান ইত্যাদি।
আরো পড়ুন : উপসর্গ কি ? উপসর্গ কাকে বলে?