ধূমপানের অপকারিতা রচনা অথবা ‍ধূমপান বিষপান রচনা

ধূমপানের অপকারিতা রচনা অথবা ‍ধূমপান বিষপান রচনা 

ধূমপানের অপকারিতা রচনা অথবা ‍ধূমপান বিষপান রচনা

ধূমপানে বিষপান

অথবা,

ধূমপানের অপকারিতা

   ভূমিকা: ধূমপান পৃথিবীতে সর্বাধিক প্রচলিত একটি মারাত্মক নেশা। যে কোনো ভাবেই যে কোনো ধরনের ধূমপানই যে স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর একথা আজ শুধু বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসাবিজ্ঞানী অথবা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের হুঁশিয়ারী সংকেত মাত্র নয়, একথা সর্বজনবিদিত।

ধূমপান অভ্যাসের কারণ: ধূমপান একটি বদ অভ্যাস। বিড়ি, সিগারেট, চুরুট, হুক্কা ইত্যাদি ধূমপানের বিভিন্ন অবলম্বন। বিভিন্ন কারণে এ অভ্যাস গড়ে ওঠে। অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা প্রধানত কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে অথবা কুসঙ্গীদের পাল্লায় পড়ে ধূমপান করতে শুরু করে। প্রাপ্ত বয়স্ক স্মার্টনেস, আভিজাত্য ‍ও সামাজিকতা বজায় রাখতে অথবা অন্যের দেখাদেখিও ধূমপানের অভ্যাস গড়ে তোলেন। তামাক এক প্রকার মাদক পাতা। কাজেই এর ধোঁয়া থেকে ধূমপায়ীগণ এক ধরনের মাতাল নেশা উপভোগ করেন, যা তাদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এ কারণে একবার ধূমপান শুরু করলে সহজে কেউ আর তা ছাড়তে পারেন না।

ধূমপান যেভাবে দেহের ক্ষতি করে: তামাকের মধ্যে নিকোটিন নামক এক প্রকার বিষাক্ত পদার্থ আছে সেটিই ধুমপায়ীদের স্বাস্থের বিভিন্ন প্রকার হানিকর প্রতিক্রিয়ার কারণ। যারা বিড়ি সিগারেট পান করেন তাদের আঙুলের ফাঁকে, ঠোঁটে, জিভের ডগায় ‍ও দাঁতের মাড়িতে এক ধরনের কালচে রন্জকের যে দাগ দেখা যায় তা নিকোটিনের জন্যই হয়। ধূমপানের ফলে ধোঁয়ার সঙ্গে এ বিষ মানুষের শ্বাসনালী দিয়ে প্রথম দিয়ে প্রথম ফুসফুসে প্রবেশ করে, পরে তা রক্তের সাথে মিশে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে এবং কিছু অংশ পুনরায় বের করে দেয়া ধোঁয়ার সাথে বের হয়ে আসে। এর ফলে নিয়মিত ধূমপায়ীদের ফুসফুসকে ধীরে ধীরে পঙ্গু করে তোলে।

বিজ্ঞানীরা ধূমপায়ীদের বক্ষাভ্যন্তরের ছবি তুলে দেখেছেনে ধূমপানে প্রত্যেকটি টানের সঙ্গে ফুসফুস কয়েক সেকেন্ডের জন্য কার্যক্ষমতা হারিয়ে নিস্পন্দন থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের, একটি মানুষের দেহে যদি বিশটি সিগারেটের নিকোটিন একসাথে  প্রবেশ করানো হয় তবে তার মৃত্যু অনিবার্য্। তবে যেহেতু মানুষের দেহে এ নিকোটিন খুব ধীরে ধীরে জমে, তাই এর প্রতিক্রিয়াও তাৎক্ষণিক না হয়ে ধীরে ধীরে হয়। রক্তের সাথে বিষ সারা শরীরে মেশার ফলে শ্বাসযন্ত্রের রোগ ছাড়াও অন্যান্য মারাত্মক রোগও ধূমপানের কারণে হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন একটি সিগারেট মানুষের পাঁচ মিনিট আয়ু কমিয়ে দেয়।

পরিসংখ্যান নিয়ে দেখা গেছে বিভিন্ন মারাত্মক রোগ যেমন- ক্যান্সার, যক্ষা, ব্রংকাইটিস ইত্যাদিতে আক্রান্ত শিশুরা অধিকাংশই ধূমপায়ী পিতামাতার সন্তান। ধূমপায়ী ব্যক্তিদের যেমন গড় আয়ূ কম তেমনি তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রেও মৃত্যুর হার অধিক-এটিই পরীক্ষিত সত্য।

ধূমপানের কারণে সৃষ্ট রোগ: বিভিন্ন জটিল ও মারাত্মক ব্যধির কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞগণ ধূমপানকে দায়ী করেন। তামাকের নিকোটিন যুক্ত ধোঁয়া প্রথমেই ফুসফুসে প্রবেশ করে বলে ‍ধূমপান ফুসফুসের বিভিন্ন প্রকার রোগের অন্যতম কারণ। শ্বাস-কষ্ট, হাঁপানী, যক্ষ্মা, ব্রংকাইটিস, ফুসফুসের প্রদাহ, ফুসফুসের আশি থেকে পঁচাশি ভাগ ক্যান্সার ধূমপানের কারণে  হয়। এছাড়াও ভুমপানের ফলে দন্ত ক্ষয়, দাঁতের স্বভঅবিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাওয়া, মাড়ির রোগ, ক্ষুধামন্দা, গ্যাস্টিক, আলসার , হৃদরোগ প্রভৃতি মারাত্মক রোগ হয়। ধূমপান দৃষ্টিশক্তিরও ক্ষতি সাধন করে। মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের অন্যতম প্রধান কারণ ধূমপান। তা হৃৎপিন্ডে রক্ত সঞ্চালনেও বাধা সৃষ্টি করে। ধূমপান উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। রক্তচাপ বৃদ্ধির ফলে করোনারী থ্রম্বসিস নামক প্রাণঘাতী রোগের সৃষ্টি হতে পারে।

ব্যক্তি জীবনে ধূমপানের অপকারিতা: ধূমপান ব্যক্তিজীবনে নানাভাবে ক্ষতিসাধন করে থাকে। ধূমপানের মধ্যদিয়ে ব্যক্তি তার দেহের মধ্যে নানাপ্রকার প্রাণঘাতী ব্যধির অনুপ্রবেশ ঘটায়। ক্রমশ সে হারায় তার স্বাস্থ ও শক্তি। ধূমপানের পেছনে অর্থের অপচয় এবং তা থেকে আগত নানা রোগ-ব্যাধির চিকিৎসা জন্য অর্থ খরচ সন্তান-সন্ততিরাও বহন করে। বদ অভ্যাসে আসক্তির কারণে ব্যক্তি তার পিতামাতা, স্ত্রী এবং আত্মীয়স্বজন, বন্দু-বান্ধবের নিকট অবহেলিত হয়।

জাতীয় জীবনে ধূমপানের অপকারিতা  : অত্যাধিক হারে ধূমপান জাতীয় স্বাস্থ্যের প্রতি হুমকিস্বরূপ। অবিচেক ধূমপায়ী জনগণ রাস্তাঘাটে, অফিস আদালতে, যানবাহনে সর্বক্ষেত্রে ধূমপান করে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষিত করে, অন্যদিকে তেমনি অধূমপায়ীদের জন্যও স্বাস্থ্যগত ক্ষতির কারণ হয়। খালি সিগারেটেরে প্যাকেট, পোড়া সিগারেটের আগুনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা যখন তখনই ঘটছে। কখনো কখনো প্রাণ ও সম্পদ সংহারী হয়ে ওঠে। ধূমপান এভাবে জাতি গঠন এবং সভ্যতা বিকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

সতর্কীকরণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা : ধূমপানের বহুমুখী ক্ষতিকর প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জনগণকে  অবহিত করে জাতির স্বাস্থ্যরক্ষা, রোগ প্রতিরোধ ও অর্থের অপচয় রোধ করার দায়িত্ব সকলেরই গ্রহণ করা উচিত। এ লক্ষে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সিগারেটের প্যাকেটে সাবধানবাণী উৎকীর্ণ করা ছাড়াও পত্র-পত্রিকা, রেডিও-টেলিভিশন ও সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে ধূমপানের অপকারিতা সম্পর্কে নানা আলোচনা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও প্রামাণ্য অনুষ্টান প্রচার করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন গুরুত্তপূর্ণ এলাকা, যেমন- পাঠাগার, হাসপাতাল, শিক্ষালয়, অফিস, আদালত, পেট্টোল পাম্প অথবা অন্যান্য দাহ্য পদার্থের কারখানা ইত্যাদিকে ধূমপান নিষিদ্ধ এলাকা (Non smoking Zone) ঘোষণা করা হচ্ছে। এতে ধূমপানের মাত্রা কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব হয়।

উপসংহার : ধূমপান সাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর জেনেও মানুষ সহজে এ অভ্যাস ত্যাগ করতে পারে না। তার অন্যতম কারণ সমাজে এর সরবরাহ। বেকারত্ব কিংবা কোনো কোনো দেশের পক্ষে জাতীয় আয়ের বিরাট অংশেরসমূহ বিনাশ ইত্যাদি কারণে তামাক বা সিগারেট উৎপাদন অব্যাহত থাকছে। তামাক চাষ অথবা সিগারেট ফ্যাক্টরীর সাথে জড়িত লক্ষ লক্ষ কৃষক-শ্রমিকের জীবিকার প্রশ্ন; তামাক ও সিগারেট উৎপাদনের ফলে অর্জিত আয়ের ভারসাম্য কিভাবে রক্ষা করা হবে ইত্যাদি প্রশ্নের সঠিক সমাধানের পথ আবিষ্কৃত না হলে শুধু উপদেশ দিয়ে ধূমপানের অভ্যাসের মূলোৎপাটন করা সম্ভব নয়। এর জন্য চাই বৃহৎ উদ্যোগ ও সকল দেশের সর্বস্তরের মানুষের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা এবং মনোবল।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button