চিঠি লেখার নিয়ম – চিঠির পরিচয় ও গুরুত্ব – www.snigdhasokal.com
মানবমনে কোনো ভাব, বক্তব্য, আবেদন ইত্যাদি অপরের কাছে লিখিতভাবে জানানো হলে, তাকে সাধারণভাবে পত্র বা চিঠি বলে। চিঠি লেখার রীতি আমাদের সংস্কৃতির এক অনুষঙ্গী উপাদান। কাগজ আবিষ্কারের পূর্বে মানুষ গাছের পাতায়, ছালে, চামড়ায়, ধাতব পাতে লিখত। তবে পাতায় লিখিত বলেই এর নাম হয় পত্র।
যোগাযোগের সহজ মাধ্যম হলো চিঠি। চিঠি মুধু যোগাযোগেরই মাধম্য নয়, বরং স্বল্পব্যয়ে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে চিঠির কোনো বিকল্প নেই। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সমারে দায়িত্বশীল মানুষের কাছে ব্যক্তিগত ও সামাজিক নানা প্রয়োজনে চিঠি লিখতে হয়। যদিও বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, ওয়্যারলেস, টেলেক্স, ফ্যাক্স, মোবাইল ফোন ইত্যাদির মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে প্রয়োজনীয় খবরাখবর অপরের কাছে খুব সহেজেই পৌছানো যায়, তদুপরি সুপ্রাচীন মাধ্যম এই চিঠির গুরুত্ব এতটুকু কমেনি। এর মূলে যেসব কারণ রয়েছে তা হলো –
চিঠি এই কথাটি শুনলেই পাঠকের মন হঠাৎ কেমন চনচন করে উঠে। অর্থাাৎ ‘চিঠি’ যে ভাব বিনিময় করে তা আর অন্য কোনোকিছু দিয়ে সম্ভব নয় বলে চিঠির গুরুত্বই সর্বজনীন। লেখক চিঠিতে নিজেকে উজাড় করে উপস্থাপন করে আা পাঠক তা অনুভব ক রে। হৃদয়ের এমন কিছু কথা থাকে, যা শুধ চিঠিতে লিখেই জানানো সম্ভব, আবার এমন কিছু কথা থাকে যা পাঠক সরাসরি শুনতে যতটা না স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে তার থেকে সে কথাগু েলা যদি চিঠির মাধ্যমে জানে তাহলে অনেক বেশি আনন্দ অনুভব করে। একটা উদাহরণ দেয়া যাক– ‘আমরা অনেক সময়ই প্রিয়জনের সঙ্গে ভাব– বিনিময় করতে গিয়েও এমন দুএকটি কথা বলি যার অর্থ শ্রোতাকে বের করে নিতে হয়; যেমন– আমি যে তোমাকে কী রকম ভালোবাসি তা ঠিক বোঝাতে পারছি না, আমার এমন কোনো ভাষা নেই যা দিয়ে তা বোঝানো যায়।
এথানে কক্তার তা র ভাষার অভাবে যা বোঝাতে পারল না শ্রোতার কিন্তু সে ভাষাটি বুঝতে কোনো অসুবিধা হলো না। এই উছয়ের না বলা অংশটুকু যে কী, তা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। কেননা তা কখনো কথা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় নাা, শুধু হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হয়। চিঠির ব্যাপারটা টিক তদ্রুপ। চিঠি পাওয়ার মাঝে কএবং চিঠি পড়ার মধ্যে হৃদয়ে যে রস, ভাব, আনন্দ, অনুভূতি জেগে উঠে – তা যে কী, তা বলা যায় না, ব্যাখ্রা করা যায় না, শুধু মন দিয়ে অনুভব করা যায়।
চিঠি শুধু ভাবেরিই মাধ্যম নয়, সাহিত্যেরও অংশ। অন্যান্য সাহিত্যের মতো পত্র– সাহিত্যেও পাঠকের কাছে বেশ সমাদৃত। চিঠির মধ্যে লেখককে খুব সহ েজই আবিষ্কার করা য়ায়। এ প্রসঙে্গ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তারঁ ‘চিন্নপত্রাবলির একটি চিঠিতে লিখেছেন , “ওর মধ্যে যা কিছু যা কিছু আমার ব্যক্তিগত জীবন– সংক্রান্ত সেটা তেমন বহুমূ ল্য নয়– কিন্তু যেটাকে আমি বাইরে থেকে সঞ্চয় করে এনেছি, যেটা এক একটা দুর্লব সৌন্দর্য , দুর্মূল্য সম্বোগের সামগ্রী, যেগুলে া আমরা জীবনের অসমান্য উপার্জন – যা হয়ত আমি ছাড়া আর েকউ দেখেনি, যা কেবল আমার সেই চিঠির পাতার মধ্যে র েয়ছে, জগতে আর কোথাও নেই – তার মর্যাদা আমি যেমন বঝব িএমন বোধ হয় আর কেউ বুঝবে না।” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ লেখা থেকে চিঠির গুরুত্ব সহজেই অনুধাবন করা যায়। একইভাবে কবিতায়ও চিঠিকে অনেক কবিই বেশ মর্মগ্রাহী করে বর্ণনা করেছেন। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘রানার’ কবিতাটির কথাই ধরা যাক, তারঁ এই কবিায় অন্তর্লীন হয়ে আছে একটি জীবনদর্শন। অপরদিকে কবিতাটিতে ফুটে উঠেছে দুঃখ –দারিদ্রে জাঁতাকলে পিষ্ট অথচ কর্তব্যপরায়ণ এক রানারের বেদনাঘন করুন জীবনকাহিনী । রানার ছুটে চলেচে চিঠির বোজার নি েয়, যে চিঠিতে রয়ে ছে জানা – অজানা খবর। কিন্তু ‘রাত্রির খামে’ রানারের দুঃখ –দারিদ্রের কথা ঢাকা পড়ে আছে বলে , কবি রানারকে জানিয়েছেন, ভোরের আকাশ তার জন্য সহানুভূতির চিঠি পাঠাবে। ককিব চিঠিকে কবিতাতে রসঘন করে যেভাবে বর্ণনা করেছেন তাতে লেখক, পাঠক, শ্রোতার কাছে চিঠির আবেদন – নিবেদন কয়েক গুণ বেড়ে যায়–
কত চিঠি লেখে লোকে–
কত সুখে, প্রেমে, আবেগে, স্মৃতিতে, কত দুঃখে ও শোকে।
এর [রানার কথা ঢাকা পড়ে থাকবেই কালো রাত্রির খাম।
দরদে তারার চোখ কাঁপে মিটিমিটি–
একে যে ভোরের আকাশ পাঠাবে সহানুভূতির চিঠি”।
তাই চিঠির আবেদন সর্বজনীন। চিঠির আবেদন, প্রয়োজনীয়তা, গুরুত্ব–তাৎপর্য সবই চিঠির খামে বন্দি– চিঠির প্রাপক, পাঠক সে তাৎপর্য উন্মেচিত করতে না পারলে, সে ‘রস’ খুজে না পেলে– তা চিরকাল চিঠির খামেই বন্দি হয়ে থাকবে।
বিষয়বস্তুঃ
চিঠির বিষবস্তু হয় নানা ধরণের। ব্যক্তিগত কথা নিয়ে লেখা চিঠি, আত্মীয়স্বজন, আপনজন, ও পরিচিতদের কাছে। সুখ–দুঃখ ও আনন্দ – বেদনাময় মনোভাব ব্যক্ত করে লেখা চিঠির বাইরে আছে ব্যবহারিক দিক। সামাজিক, বৈষয়িক, চাকরি– বাকরি, ব্যবসা – বাণিজ্য ইত্যাদি বিষয়েও চিঠি লেখা হয়। কারো শুভাগমে বা করুন বিদায়ের যে অভিনন্দন জ্ঞাপন করা হয় তাও পত্রের মর্যদা পায়। সংবাদপত্রের চিঠি লিখে অভাব– অভিযোগ জানিয়ে প্রতিকার প্রার্থনা করা হয়। বাস্তব জীবনের এসব প্রয়োজনে চিঠিপত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সাহিত্যিকরা চিঠিপত্রের রসের সঞ্চার করে তাকে নিয়ে আসে সাহিত্য সৃষ্টির মর্যাদায়।
চিঠির প্রকাভেদঃ
বিষয়বস্তু, প্রসঙ্গ ও কাঠামো অনুসারে বিভিন্ন ধরণের পত্রকে নিম্নলিখিত শ্রেণিতে ভাগ করা যায়:
১. ব্যক্তিগত পত্র: পিতার কাছে পুত্রের পত্র, পুত্রের কাছে পিতার পত্র, ছোট ভাইয়ের কাছ বড় ভাইয়ের পত্র, বন্ধুর কাছে পত্র, ছোট ভাই, বোনাদের আদেশ উপদেশ মূলক পত্র, পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য কিংবা পুরুস্কারপ্রাপ্তির জন্য অভিনন্দন জানিয়ে পত্র ইত্যাদি।
২. নিমন্ত্রণপত্র: নিমন্ত্রণপত্র যেমন– জন্মদিন, বিবাহ, উৎসব, জাতীয় স্মরনীয় দিবস, জন্মজয়ন্তী প্রভৃতি নিমন্ত্রণপত্র বা সামাজিক চিঠির অন্তর্ভুক্ত।
৩. আবেদনপত্র বা দরখাস্ত: যেমন– ছুটির আবেদন, চাকরির জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন েইত্যাদি।
৪. সংবাদপত্র প্রকাশের জন্য চিঠি: পত্রিকা সম্পাদকের কাছে পত্র লিখন বা সংবাদপত্রে প্রকাশের নিমিত্ত পত্রলিখন ইত্যাদি।
৫. বাণিজ্যিক বা ব্যবসায়িক পত্র: বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি ব্যাংক, বীমা ও অন্যান্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক লেনদেনের জন্য এ ধরণের চিঠির আদান –প্রদান হয়ে থাকে।
৬. স্মারকলিপি ও মানপত্র: কোনো শ্রদ্ধেয় বা গুণী ব্যক্তিকে স্বাগত /অভিনন্দন/বিদায় সংবর্ধনা/শ্রদ্ধা জানানো ইত্যাদি।
পত্রের প্রকাশভঙ্গি যেভাবে হতে হবেঃ
বিষয়বস্তু অনুসারে পত্রে প্রকাশভঙ্গি গড়ে তুলতে হয়। ব্যক্তিগত চিঠিতে ব্যক্তি– হৃদয়ভাব প্রাধান্য পায় বলে াততে সাহিত্যরস সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে। সাহিত্যের রস পেয়ে ব্যক্তিগত চিঠিই পত্রসাহিত্য হিসেবে মর্যাদা পায়। ব্যক্তিগত চিঠিতে লেখক নিজেকে আর্ষনীয়ভাবে প্রকাশ করেণ। সামাজিক চিঠিতে প্রয়োজনীয় বক্তব্যটুকু সুনির্দিষ্টিভাবে উপস্থাপিত হয়। ব্যবাহারিক চিঠিতে লেখকের প্রয়োজনের কথাই প্রাধান্য পায়। তাই এতে লেখকের ব্যক্তি – হৃদয়ের অনুভুতি অনুপস্থিত থাকে। সুখ দুঃখের কথা সেখানে থাকে না। বাহুল্য বক্তব্র ও প্রকাশভঙ্গির সেখানে অনুপস্থিত থাকে। স্কুলের প্রথম দিনের অভিজ্ঞ বর্ণনা করে বন্ধকে লে’খা ব্যক্তিগত চিঠিতে যেভাবে িইনিয়ে বিনিয়ে রসসঞ্চার করে বক্তব্র রাখা যায় , কোনো চাকরির আবেদনে সংবলিত ব্যবহারিক পত্রে সে ধরণের রসাল বক্তব্র তুলে ধ রা যায় না , ভাবাবেগ দিয়ে ব্যক্তিগত চিঠিকে রসমধুরর করা চলে , কিন্তু প্রয়োজন সাধনের বাইরে একটি কথাও থাকবে না ব্যবহারিক চিঠিতে। তবে সব চিঠিতেই একটা মুন্সিয়ানা ফুটিয়ে তোলার অবকাশ থেকে যায় । চিঠি বিভিন্ন কথা ও কাজের সাক্ষী, লেনদেনের রেকর্ড।
যে কোনো বিষয়েই হোন কনা কেন, চিঠি বক্তব্যের বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কলমের আঁচড়ে লেখা বক্তব্য নিয়ে খামে বন্দি কাগজটি যখন প্রাপকের হাতে পৌছায় তখন তা নিশ্চূ অর্থবহ হতে হবে। তাই চিঠি লেখার সময় চিঠির রীতিনীতি ও গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকা দরকার।
বাংলা ভাষায় চিঠি লেখার িঐতিহ্য দীর্ধদিনের । আঠারোশ সালে আগেই বাংলা গদ্যচর্চা প্রথমেই বাংলা চিঠির নমুনা পাওয়া গেছে। তখন পর্যন্ত চিঠির ধরণ ধারণ নির্ধারিত হয়ে ওঠেনি। বাংলা চিঠিপত্র রচনা পেছনে েইংরেজির প্রভাব বিদ্যমান। ইংরেজি চিঠির রীতিপদ্ধতি অনুসরণ করে বাংলা চিঠির বিকাশ ঘঠে।
চিঠিপত্র দৈনন্দিন প্রয়োজনে সাধনের কাজে লাগে বলে তার বক্তব্যে, প্রকাশভঙ্গিতে, রীতিপদ্ধতিতে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে আকর্ষনীয় করে তুলতে হবে। চিঠি লেখার সময় যেসব দিক সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে তা হলো:-
১. চিঠি লেখার পদ্ধতি মেনে চলতে হবে।
২. চিঠির বক্তব্য সুস্পষ্ট হতে হবে।
৩. সহজ –সরল ভাষায় চিঠি লিখতে হবে।
৪. প্রকাশভঙ্গি হবে আকর্ষনীয় ।
৫. হাতে লেখা চিঠিতে হস্তাক্ষর সুন্দর হওয়অ উচিত।
চিঠির অংশঃ
চিঠির অংশগুলো হলো –
১. চিঠির ওপরের অংশে মঙ্গলসূচক শব্দ।
২. চিঠির ওপরের অংশের ডান কোণে স্থান ও তারিখ।
৩. চিঠির ওপরের অংশে বাঁ দিকে প্রাপকের উদ্দেশে সম্বোধন।
৪. চিঠির বক্তব্য বিষয়।
৫. চিঠির শেষে ডান দিকে লেখকের স্বাক্ষর ও ঠিকানা।
৬. চিঠির শিরোনাম।
এই অংশ কয়টি চিঠির ।আনুষ্ঠানিকতা।চিঠি লেখার ক্ষেত্রে েএগুলো মানতে হবে। তবে চিঠির বৈচিত্র্যের প্রেক্ষিতে েএসব বিষয়ও ভিন্ন ধরণের হতে পারে। নিচে এ ব্যাপারে আলোচনা করা হলো –
১. মঙ্গলসূচকশব্দ: ব্যক্তিগত চিঠিতে মঙ্গলসূচক শব্দ ব্যবহারের রীতি প্রচলিত আছে, ব্যবহারিক পত্রে আবশ্যকতা নেই। আগের দিনে এসব মঙ্গলসুচক শব্দ চিঠিতে ব্যবহৃত হতো। এখনকার পরানো ঢংয়ের চিঠিতে এসবের ব্যবহার দেখা যেথে পারে। মঙ্গর সূচক শব্দ ব্যবাহারের মুসলিশ ও হিন্দু রীতি নামে দুটো রীতি লক্ষ করা যায়। কোনো ক্ষেত্রে শব্দের ব্যবহার স্বতন্ত্র্য থাকার জন্য মুসলিম ও হিন্দু লেখক নিজস্ব রীতির শব্দ ব্যবহার করে থাকে। অ্ন্য ধর্মাবলম্বীদেরক্ষেত্রে তেমনি স্বতন্ত্র শব্দ ব্যবহার হতে পারে। মুসলিম রীতিতে ’ইয়া রব’. ইয়া আল্লাগ’, ‘আল্লাহু আকবর’, ‘এলাহি ভরসা’, ‘হক নাম ভরসা’ ‘৭৮৬’ ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। হিন্দু রীতিতে আছে ‘ওঁ’, ’ওম’, শ্রী শ্রী দুর্গা, হরি সহায়, সরস্বৈত্যে নম, ইত্যাদি শব্দ। তবে এসব রীতি আগকোর আমলের চিঠিতে দেখা গছে। বর্তমানে প্রায় লোপ পেয়ে গেছে। আজকাল শিক্ষিত লোকেরা অনেকেই মঙ্গলাচরণের পৃথক রীতি অনুসরণ করে না – চিঠিতে সাধারণ রীতিই অনুসরণ করতে দেখা যায়। ব্যক্তিগত ও সামাজিক চিঠিতে বেলাূয়ই মঙ্গল সূচক ঠিঠি ব্যবহার হেয়ে থাকে। আধুনিকচিঠিতে একটি সর্বজনীন রীফ ফুটিয়ে তোলা র প্রবনতা লক্ষণীয় । আরবীতে বা বাংলায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ লি েখও কেউ কেউ চিঠি শুরু করে।
২. চিঠি লেখার স্থান ও তারিখ: চিঠির উপরের অংশের ডান কোণে চিঠি লেখার স্থান ও তারিখ উল্লেখ করার রীতি প্রচলিত আছে। ব্যক্তিগত ও সামাজিক ঠিঠিতে এ ধরণের স্থান ও তারিখ নির্দেশিত থাকে। আবার কখনো কখনো চিঠির মূল বক্তব্যের শেষে ইতি দিয়ে তারিখ উল্লেখ করা হয়। নামের নিচেও অনেক সময় তারিখ উল্লেখ করে। কখনো পত্রে নিচের দিকে বাঁ পাশে স্থান ও তারিখ লেখা হয়। আবেদনপত্রে ও স্মারকপত্রে এ ধরণের স্থান ও তারিখের উল্লেখ থাকে। অফিসের চিঠিতে ওপরের অংশে চিঠির নম্বর ও তারিখ থাকে। আজকাল অফিসের চিঠিতে বাংলা ও ইংরেজি তারিখ উল্লেখ করতে হ য়। চিঠিতে লেখার স্থান উল্লেক করার সময় ঠিকানায় বাড়ির নাম থাকলে তা উল্লেখ করা চলে।
৩. চিঠির সম্বোধন: চিঠিপত্রে বক্তব্য বিষয় লেখা শুরুর আগে বামদিকে প্রাপকের উদ্দেশ্যে সম্বোধনসূচক কথা লিখতে হয়। এতে মুসলিম ও হিন্দুরীতি পার্থক্য আছে। পত্রপ্রেরক ও প্রাপকের সম্পর্ক ও বয়সের প্রেক্ষিতে এই সম্বোধন ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। মুসলিম রীতিতে শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিকে ‘পাক জনাবেষু’, খেদমতেষূ, ইত্যাদি এবং হিন্দু রীতিতে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিকে ‘শ্রীচরণেষু, শ্রীচরণকমলেষু, পূজনীয়, ইত্যাদি শব্দ প্রয়োগ করা হয়। বয়সের দিক থেক ছোটদের সম্বোদন মুসলিম রীতিতে দোয়াবরেষু, এবং হিন্দু রীতিতে কল্যাণীয়েষূ, স্নেহাসস্পদ, িইত্যাদি লিখতে হয়। বন্ধুবান্ধবেরপ্রতি বন্ধুবর প্রিয়, প্রিয়বরেষু, সুহৃদয়েষু, ইত্যাদি শব্দ লেখার রীতি আছে। পরিচিত বা অল্প পরিচিত লোককে প্রিয় মহাশয়, জনাব, ,মহোদয়, ইত্যাদি সেম্বোদন করা চলে।
সম্বোধনের পর এবং বক্তব্য শুরু করার আগে ‘সবিনয়ে’, ’বিনীত নিবেদন’ সালামবাদ আরজ, যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শণপূর্বক, ইত্যাদি কথা ব্যবহারের রীতি দেখা যায়। তবে এসব পরানো শব্দাড়ম্বর বাদ দিয়ে আজকাল সোজাসুজি বক্তব্য প্রকাশের দকেই পত্রলেখকের দৃষ্টি নিবন্ধ হচ্ছে।
৪. চিঠির বক্তব্য: চিঠিতে সম্বোধনের পর মূল বক্তব্য উপস্থাপিত হয়। এটাই চিঠির সবচেয়ে প্রয়োজনীয় দিক। বক্তব্য স্পষ্টভাবে সুশৃঙ্খলভাবে এখানে বিধৃত হবে। বক্তব্যের সূত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষার প্রয়োজনে বিভন্ন অনুচ্ছেদ বক্তব্য বিষয়ে বিন্যস্ত হতে পারে।
৫. পত্রলেখকে স্বাক্ষর :চিঠির বক্তব্য লেখার শেষ করার পর নিচে ডানদিকে লেখকের নাম স্বাক্ষর করতে হয়। কেউ কেউ বাম পাশেও স্বাক্ষর করে। অনেক চিঠির শেষে সমাপ্তিসূচক ‘ইতি’ কথাটি প্রয়োগ করতে হয়। চিঠির শেষাংশে ব্যক্তিগত কুশলাদি প্রকাশ করে ুদু-একটি কথা লেখা হয়। স্বাক্ষরে শেষে তারিখ লেখারও নিদর্শন পাওয়া যায়। অফিসের চিঠি হলে পুরো নাম ওপদবী উল্লেখ করে সিলমোহর ব্যবহার করা হয়। স্বাক্ষরের আগে শিষ্টাচারমূলক শব্দ ব্যাবহারের রীতি প্রচলিত আছে। লেখকের সঙ্গে সম্পর্ক ও বয়সের প্রেক্ষিতে পৃথক মুসলিম ও হিন্দুরীতির নিম্নরূপ শব্দ ব্যবহারের নিদর্শন রয়েছে –
ক. গুরুজনের প্রতি: স্নেহের, খাকসার, প্রণত, সেবক, স্নেহভাজন, ইত্যাদ্
খ. ছোটদের প্রতি: আশীর্বাদক, শুভার্থী,তোমার ইত্যাদি।
গ. বন্ধুবান্ধবের প্রতি: প্রীতিমুগ্ধ, গুণমুগ্ধ, তোমার ইত্যাদি।
গ. সাধারণ: আপনার বিশ্বস্ত, নিবেদক ইত্যাদি।
এসব শব্দ ব্যবহারেও বেচিত্র আছে।
৬.শিরোনাম বা চিঠির বাইরের অংশ: চিঠির বাইরের অংশ বলতে খাম বা পেস্টকার্ডের উপর যাকে চিঠি লেকা হচ্ছে তার অর্থাৎ পত্র-প্রাপরেক নাম ঠিকানা বোঝায়। খাম বা পোস্টকার্ডের পিঠে ডানদিকের নিচে প্রাপক কথাটি কলিখে তা রনিচে পত্র- প্রাপকের নাম- ঠিকানা লেখাই আন্তর্জাতিক রীতি। কাম বা পোস্টকার্ডের পিঠে বামদিকে প্রেরক কথাটি লিখে প্রত্র –প্রেরকের নাম- ঠিকানা লেখা ুউচিত। কখনো কোনো কারণে কচিঠি ফেরত এলে ওই ঠিকানায় ঠেরত আসবে। ঠিকানায় অনেক সময় কো কথাটি ব্যবহার করতে হয়। সেক্ষেত্রে এর পরিবর্তে বাংলা প্রযত্নে লেখা যেতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশে ডাক বিভাগ যোগাযোগের সুবির্ধার্থে পোস্টার কোডের প্রচলন করেছে। এটি পোস্ট অফিসের নাম নির্দেশ করে। তাই দেশের মধ্যে চিঠিপত্র প্রেরণের সময় খামে পোস্টাল কোড ব্যবহার করতে হয়।