চলিত ভাষা কাকে বলে? চলিত ভাষার বৈশিষ্ট্য – snigdhasokal.com
চলিত ভাষা কাকে বলে?
ড. এনামুল হকের মতে, “তদ্ভব শব্দ, সংকুচিত ক্রিয়া, হ্রস্বীকৃত সর্বনাম পদ এবং লেখকের মনোভাব অনযায়ী পদবিন্যাস প্রণালির ব্যবহারসহ যে স্বচ্ছন্দ, চটুল ও সর্বজনীন সাহিত্যিক গদ্যরীতি কলিকাতা ও ভাগীরথী তীরবর্তী অঞ্চরে মুখের ভাষার আদলে গড়ে উঠেছে তারই নাম চলিত ভাষা।”
আরো পড়ুনঃ সাধু ভাষা কাকে বলে?
চলিত ভাষার বৈশিষ্ট্যঃ
- চলিত ভাষা সহ পরিবর্তনশীল । কারণ, এট মানু ষের মুখের ভাষা বা উপভাষা। ব্যাকরণেল অনুশানস এতে অনেকটা শিথিল। এটা শিক্ষিত জনের লেখার ও বলার রূপ প্রাধ্যান্য পায়।
- এটা কথ্য ভাষা। বিশেষ করে এটা কলিকাতা ও ভাগীরথী নদী দু্ িতীরের লোকদের আঞ্চলিক ভাষা কিন্তু আজ সসর্বজনীন ও সহজবোধ্য ভাষা। তাই এটাও লেখ্য সাহিত্যিক ভাষা
- চলিত ভাষায় তদ্ভব (সংস্কৃত থেকে উৎপন্ন) অর্ধতৎসম ( সংস্কৃত বিকৃত শব্দ), দেশি, বিদেশি শব্দে ব্যবহার বেশি। তাই এটা সহজ, সরণ , চটুল ও লঘু।
- চলিত ভাষা কথোপকথন, সংলাপ, বক্তৃতা ইত্যাদির জন্য খবই উপযোগী। কারণ, এই রীতিতে অনেক শব্দ ও ব্যাক্যাংশ পরিবর্তিত উচ্চারণে কথিত ও লিখিত হয়।
- হালকাব বৈশিষ্ট্যের সংকুচিত ক্রিয়াপদ তিনয়ে মুখের ভাষার সাথে মিল কেরখে েভাষারীতির উদ্ভব হয়েছে তার নাম চলিত ভাষা। যেমন – আমি ভাত খেয়েছি।
- চলিত ভাষায় ক্রিয়াপদগুলো সংক্ষিপ্তরূপে বা সংবুচিতরূপে, ব্যবহৃতত হয় । যেমন- করে , করেছি, পড়েছি, বলেছি, করেছ ইত্যাদি।
- চলিত ভাষায় সর্বনাম পদগুলো সংকুচিতরূপে ব্যবহৃত হয় । যেমন- এ, সে, এরা, তারা, তাকে, তাতে ইত্যাদি।
- চলিত ভাষায় তদ্ভব শব্দের প্রাধান্য বেশি। যেমন- থেকে, হতে, দিয়ে ইত্যাদি।
- চলিত ভাষায় সংস্কৃত অব্যয়গুলোর তদ্ভব রূপই ব্যবহৃত হয়। যেমন- যদিও, বরংক, তবুও, আজ ইত্যাদি।
- চলিত ভাষা স্বাভাবিক ও জীবন্ত।
- চলিত ভাষার চাল অপেক্ষাকৃত লঘু।
- চলিত ভাসা বেগবান এবং নিত্র নতুন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ক্রমশ সমৃদ্ধ হচ্ছে। এ ভাষা উত্তরোত্ত্র প্রাণবন্ত ও শ্রীমান হচ্ছে।
- চলিত ভাষা ততটা ঐতিত্যমন্ডিত ও সমৃদ্ধ না হলেও সকলে বোধগম্য।
- চলিত ভাষায় ধ্বন্যাত্মক শব্দের ব্যবহার প্রচুর।
- চলিত ভাষা আধুনিক।
চলিত ভাষার কিছু উদাহরণঃ
১।বিল থেকে বাতাসটা উৃেট আসছে। এখন অশথ গঅছটার মাথায় ঘুরছে, পাক খাচ্ছে এগিয়ে আসছে। খজ্ণ্ঞনীর বাজনাও এহগয়ে এলো সঙ্গে, কোলের ছাটিঁ আর কি বিশাখার কথা, কি তমালের কথা-সব এসে আবার দূরে চলে গেল।
…….[ আত্মজা ও একটি করবী গাছ: হাসাস আজিজুল হক]
২। আমাদের পন্ডিত মশাই তর্কালঙ্কার না কাব্যবিশারদ ছিলেন আমার ঠিক মনে নেই। কিন্তু এ কথা মনে আছেযে পন্ডিতসমাজ তাঁর খ্যাতি ছিল প্রচুর এবং পিতৃপিতামহ চতুর্দশ পুরুষ শুধু যে ভারতীয় সংস্কৃকতর একনিষ্ট সাধক ছিলেন তা নয়। তারা কখনো পরান্ন ভক্ষণ করেননে িপালপরচ শ্রদ্ধনিমন্ত্রণে পাত পারায় তো কথাই ওঠে না। বাঙলা ভাষার প্রতি পন্ডিতমশাইয়ের ছিল অবিচল অকৃত্রিম অশ্রদ্ধা, ঘৃণা বললেও হয়ত বাড়িয়ে বরা হয় না। বাঙলাতে যেটুকু খাটিঁ সংস্কৃত বস্তু আছে, তিনি মাত্র সেটুকু পড়াতে রজি হতেন। অর্থাৎ কৃৎ, তদ্ধিত, সন্ধি, এবং সমাস। তাও বাঙলা সমাস না।
……[ পাদটীকা: সৈয়দ মসজতবা আলী]
৩। সময় কারুরই হাত ধরা নয়-নদীর স্রোতের মত–জীবের পরমায়ুর মত কারুরই অপেক্ষা করে না। গির্জার ঘড়িতে ঢং ঢং করে দশটা বেজে গ্যালো। সোঁ সোঁ করে একটা বড় ঝড় উঠলো–রাস্তার ধুলো উড়ে যেন অন্ধকার আরও বাড়িয়ে দিলে মেঘের কড়মড় ডাক ও বিদ্যুতের চকমকিতে ক্ষুদ্রে ক্ষুদ্রে ছেলেরা মার কোলে কুন্ডলি আরম্ভ কল্লে- মুষলের ধারে ভারী এক পসলা বৃষ্টি এলো।
……[ হুতোম প্যাঁচার নকশা: কালী প্রসন্ন]
৪। ও কি শব্দ। ঐ। আবার! আবার! ঐ কি শব্দ জাহা
……[ সাজাহান : দ্বিজেন্দ্রলাল রায়]
সাধু ও চতি রীতির প্রয়োগঃ
সাধু রীতি: ‘যে কথা একবার জমিয়ে বলা গিয়াছে, তাহার পর তা ফেনাইয়া ব্যাখ্যা করা চলে না’।
চলিত রীতি: ‘ যে কথা একবার জমে বলা গেছ, তার পর তা ফেনিয়ে ব্যাখ্যা করা চলে না।
সাধু রীতি: ‘ অতঃপর তাহারা চলিয়অ গের।
চলিত রীত: তারপর তারা চলে গেল।
সাধু রীতি: এইরূপ সাদৃশ্য অনেক চক্ষে পড়িবে।
চলিত রীতি: এইরকম সাদৃশ্য অনেক চোখে পড়বে।
সাধু রীতি: সে আসিবে বলিয়া ভরসাও করেতেছি না।
চলিত রীতি: সে আসবে বলে ভরসাও করছি না
নিচে কিছু সাধু ও চলিত ভাষার উদাহরণ দেওয়া হলো
সাধু ভাষা = চলিত ভাষা
মস্তক = মাথা
জুতা = জুতো
তুলা = তুলো
শুষ্ক/শুকনা = শুকনো
বন্য= বুনো
তাহার/ উঁহারা = তাঁরা/ তাঁরা
তাহাকে /উহাকে = তাকে/ ওকে
তাহার/তাঁহার = তার/তাঁর
করিবার = করবার/ করার
পাইয়াছিলেন = পেয়েছিলেন
হইলেন = হলেন
আসিয়া = এসে
হইল = হল/ হলো
দেখিয়া = দেখে
করিলেন = করলেন
দেন নাই = দেননি
পার হইয়া = পেরিয়ে
পড়িল = পড়ল/ পড়লো
করিয়া = করে
ভাঙিয়া যাইতে লাগির = ভেঙে যেতে লাগল
ফুটিয়া রহিয়াছে = ফুটে রয়েছে
পূর্বেই = আগেই
সহিত = সঙ্গে/ সাথে