গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন নহে বিদ্যা ,নহে ধন ,হলে প্রয়োজন ভাব সম্প্রসারণ
গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন নহে বিদ্যা ,নহে ধন ,হলে প্রয়োজন ।
বিদ্যা এবং ধনের সার্থকতা নির্ভর করে মানুষের প্রয়োজন মেটানোর ওপর ।পার্থিব জীবনে ধন-সম্পদ ও বিদ্যার গুরুত্ব অপরিসীম ।গ্রন্থ বা বইপুস্তক পাঠের মাধ্যমে আমরা সাধারণত বিদ্যার্জন তথা জ্ঞানলাভ করে থাকি । কিন্তু শুধু পুথিগত জ্ঞানলাভ করলে শিক্ষা সমাপ্ত হয় না ।বইয়ে যে বিদ্যা সঞ্চিত থাকে মানুষ চর্চার ’মাধ্যমে তাকে আত্নস্থ করে এবং মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটায় ।গ্রন্থপাঠ থেকে অর্জিত বিদ্যা আমরা আমাদের ব্যবহারিক জীবনে যথার্থ কাজে লাগাতে না পারি,তার যদি প্রয়োগমুখিতা না থাকে ,তাহলে সে বিদ্যা বা জ্ঞান মূল্যহীন ,নিরর্থক ।সে বিদ্যাকে হাতের ধন-সম্পদের সঙ্গে তুলনা করা যায় ।অপরের অধিকৃত সম্পদে আমাদের কোনো অধিকার নেই,কারণ প্রয়োজনে তা আমরা ব্যবহার করতে পারি না ।ফলে সে সম্পদ যেমন আমাদের কাছে মূল্যহীন,তেমনি চিকিৎসাশাস্ত অধ্যয়ন করেও যদি আমরা রোগ নির্ণয় ও প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থাপএ দিতে না পারি অথবা আমাদের অর্জিত জ্ঞানকে যদি প্রাতাহিক জীবনে কাজে লাগাতে না পারি ,তাহলে আমাদের সে বিদ্যা ও ব্যর্থতায় পযবসিত হবে ।এ প্রসঙ্গে চাণক্য পন্ডিতের মন্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য ,পৃথিতে যে বিদ্যা থাকে আর পরের হাতে যে ধন থাকে দুটিই সমান ।দরকারের সময় সে বিদ্যা বিদ্যা নয় ।সে ধন ধন নয় ।’তা ছাড়া ,যে জ্ঞান ব্যবহারিক জীবনে কোনো কাজে আসে না ,সে জ্ঞান দ্বারা নিজেরও যেমন কোনো উপকার হয় না,তেমনি জগতের ও কোনো কল্যাণ সাধিত হয না।সুতরাং সার্থক ও সুন্দর জীবনের জন্যে বিদ্যাকে বুদ্ধি দ্বারা আত্নস্থ করে বাস্তবের সঙ্গে সংযোগ করা দরকার এবং ধন-সম্পওি অন্যের কাছে অহেতুক গচ্ছিত না রেখে নিজের আয়ওে রাখা দরকার,যেন প্রয়োজন সময়ে নিজের কাজ লাগানো যায এবং দেশ ও দশের মঙ্গলে বা স্বার্থে সাহায্য করা যায় ।
গ্রন্থগত বিদ্যা যা আত্নস্থ করা হয নি এবং অন্যের ধন যা স্বীয় করায়ও হয় নি –এ সবই নিরর্থক ।কারণ প্রয়োজনের মুহূর্তে এগুলো যথাযথ ব্যবহার করা সম্ভব হয় না ।প্রকৃতপক্ষে যে-বিষয়টি আত্নস্থ করা যায় না,নিজের অধিকারেও ব্যবহারে আনা যায় না তা যতই সমৃদ্ধ হোক তাতে মানুষের কোনো উপকার হয় না।
গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন নহে বিদ্যা ,নহে ধন ,হলে প্রয়োজন ।
মানুষের অভিজ্ঞতা ও প্রমাণ –লদ্ধ জ্ঞান বইয়ের মধ্যে সঞ্চিত থাকে ।বই পাঠ করলে পৃথিবীর সব ধরনের জ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায় ।কেউ যদি নিয়মিত বই পড়ে তাহলে সে ধীরে ধীরে নিজেকে জ্ঞানী করে তুলতে পারবে ।বই থেকে অর্জিত এই জ্ঞান দিয়ে সে নিজের বা অন্যের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম ।বই থেকে আহরিত জ্ঞান থেকে সে নিজ যেমন আলোকিত হতে পারে ,অন্যকেও আলোকিত করতে পারে ।কিন্তু জ্ঞান যদি বইয়ের মধ্যেই শুধু আবদ্ধ থাকে ,তাহলে তা কারো কোনো কাজে আসে না ।ধরা যাক,কোনো ব্যক্তি লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে হাজার হাজার বই কিনলেন আর তা দিয়ে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করলেন ।লাইব্রেরির তাকে তাকে বইগুলোকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখলেন ।কিন্তু জ্ঞানের কোনো বিষয়ে কেউ যদি তাঁকে প্রশ্ন করে,তিনি তার যথাযোগ্য জবাব দিতে ব্যর্থ হবেন ।আবার বইয়ের বিদ্যা না বুঝে কেবল ঠোঁটস্হ বা মুখস্হ করলেই হবে না ।এই বিদ্যার প্রায়োগিক দিকটিও উপলদ্ধি করতে হবে ।অনেকটা জায়গা জমি বা অর্থের মতো ।নিজের সম্পদ-সম্পওি অন্যের হাতে থাকলে তা ভোগ করা যায় না ।অন্যের কাছে থাকা অর্থ আর বইয়ের পাতার সীমাবদ্ধ জ্ঞান এভাবে সমার্থক হয়ে যায় বইকে শুধু পরীক্ষা পাশের উপকরণ মনে চলবে না । বইয়ের জ্ঞানকে জীবনে কাজে লাগাতে পারলে তবেই সার্থকতা ।
গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন নহে বিদ্যা ,নহে ধন ,হলে প্রয়োজন ।
মূলভাব : অর্জনকৃত বিদ্যা যদি প্রয়োগ করা না যায় ,তাহলে সে বিদ্যা মূল্যহীন ও অর্থহীন ।
সম্প্রসারিত ভাব:গ্রন্থের সাহায্য আমরা বিদ্যার্জন তথা জ্ঞনলাভ করে থাকি ।কিন্তু অর্জিত বিদ্যার ব্যবহারিক প্রয়োগ না শিখলে তা অর্থহীন হয়ে যায় । গ্রন্থের মধ্যে বিদ্যা লিখিত আছে ।গ্রন্থ সংগ্রহ করে পাঠ করলে তা অর্জন করা যায় ।কিন্তু শুধু পুঁথিগত বিদ্যা কোনো কাজে আসে না ।তাকে ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগ করতে পারলেই সার্থক হয় ।পৃথিবীতে প্রচুর ধনসম্পদ রয়েছে ।পরিশ্রম করলেই তা উপার্জন করা যায় ।পৃথিবীতে বাঁচতে হলে ধনসম্পদের প্রয়োজন হয় ।পরিশ্রম করে তা উপার্জন না করলে প্রয়োজনের সময় পাওয় যায় না ।সুদিনে অনেক বন্ধু পাওয় গেলেও দুর্দিনে কাউকে পাওয়া যায় না ।গ্রন্থাগারে প্রচুর গ্রন্থ থাকলেই চলেন না ।তাদের মধ্যে যেসব বিদ্যার বিষয়ে আছে,সেগুলোকে ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগ করতে না পারলেই কোনোই প্রয়োজন মেটে না ।নিজের জন্য সঞ্চিত না রেখে ধনসম্পদ পরের হস্তে তুলে দিলেও প্রয়োজনের সময় ফিরে পাওয়া যায় না । যে প্রয়োজন মেটানোর জন্যে বিদ্যা ও ধনসম্পদ অর্জন করা হয় ,তা যদি যথতাসময়ে পাওয়া না যায় ,তাহলে তাদের কোনো মূল্য নেই ।যে জ্ঞান কোনো ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগ করা যায় না ,সে জ্ঞান দ্বারা নিজে যেমন উপকৃত হয় না ;জগতের ও কোনো কল্যাণ সাধিত হয় না ।তাই আমাদের উচিত অর্জনকৃত বিদ্যাকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা এবং জীবনকে সার্থক ও সুন্দর করা ।