কে লইবে মোর কার্য?’কহে সন্ধ্যারবি-ভাবসম্প্রসারণ
কে লইবে মোর কার্য?’কহে সন্ধ্যারবি-
প্রকৃতির দিকে যখন আমরা তাকাই অনেক কঠিন সত্য উপলদ্ধি করতে পারি ।প্রকৃতির মধ্যে ছড়িয়ে আছে এরকম অনেক দৃষ্টান্ত ।সূয যখন অস্ত যায়,পৃথিবী যখন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে তখন এই ঘন তমসায় পৃথিবীর অন্ধকার দূর করার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য কেউ এগিয়ে আসে না ।এসেছে একটি ক্ষুদ্র মাটির প্রদীপ ।এই প্রদীপ সারা পৃথিবীকে আলোকিত করতে পারেনা ,দূর করতে পারে না বিশাল অন্ধকার ।কিন্তু তার ক্ষুদ্র আলোকচ্ছটায় মানুষ দেখতে পায় আলোর রেখা ।ক্ষুদ্র দীপশিখা তার সামান্য শক্তি দিয়ে যে দায়িত্বভার তুলে নিল তার মূল্য কম নয় ।ক্ষুদ্র শক্তি ও সামর্থ্য নিয়ে সে মানুষের উপকারে এগিয়ে এসেছে –এটাই বড় কথা ।পৃথিবীতে,আমাদের সমাজব্যবস্থায় এরূপ দৃষ্টান্ত আমরা অনেক দেখতে পাই ।যখন ধনশালী ,প্রতিপওিশালী ,ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা মানুষের দুঃখ –কষ্টে এগিয়ে আসেন না তখন দেখা যায় লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা কোনো –একজন সাধারণ মানুষ তাঁর সামান্য সামর্থ্য নিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে এগিয়ে আসেন ।তাঁর এ সাহায্য ক্ষুদ্র হতে পারে,কিন্তু তাঁর এ কল্যানকার্মী মনোভাব বড় ও অনোক মহৎ ।বস্তুত সমাজের বিভিন্ন ধরনের লোক বাস করে ।তাদের মধ্যে কেউ জ্ঞানী,কেউ মূর্খ,কেউ গুণী,কেউ সাধারণ,কেউবা অসাধারণ গুনাবলির অধিকারী ।প্রত্যেককেই নিজ নিজ যোগ্যতা ও প্রতিভা অনুযায় সমাজের জন্যে,দেশের জন্যে কিছু না কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয় ।কিন্তু অধিকাংশ মানুষেই যথাযথ যোগ্যতা থাকা সও্ব্রে তা এড়াতে চান ।আর এর ফলেই পৃথিবীতে যুগে যুগে ঘটে মূল্যবোধের ব্যাপক অবক্ষয় ।তবু কিছু কিছু ব্যক্তি তাদের ক্ষদ্র সামর্থ্য নিয়েও অকৃত্রিম কর্তব্যনিষ্ঠার বলে বলীয়ান হয়ে সমাজের গুরুদায়িত্বকে নিজ কাঁধে তুলে নেন ।তাঁদের এ সদিচ্ছা এবং মহান প্রচেষ্টাই কোনো জাতির ঐতিহাসিক মূল্যবোধকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে । অস্তগামী সূযের আলো বিতরণ করার মহান দায়িত্ব যদি ক্ষুদ্র শক্তিসম্পন্ন ছোট্র মাটির প্রদীপ শিখাটি নিজের কাঁধে নিয়ে তা নিজ সাধ্যমত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে পারে ,তাহলে এটা নিশ্চিত ,যে কোন মানুষও নিজের সাধ্যমত তার ঐতিহাসিক গুরুদায়িত্বটি ও সঠিকভাবে পালন করতে পারবে ।প্রকৃতপক্ষে দুরূহ কর্ম সম্পাদানে কিংবা পরের মঙ্গল ও হিতসাধনের জন্য মানুষের সদিচ্ছাটাই সবচেয়ে বড় কথা ।মানব ইতিহাস পযালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই মানব-সভ্যতার উথান-পতনে কখনো কখনো নেমে এসেছে গভীর নৈরাশ্য ও বেদনায়দায়ক অবক্ষয় ।সভ্যতার বিবর্তনের বহু সঙ্কটময় মুহূর্তে হজরত মুহম্মদ[স] ,জিশুখ্রিষ্ট ,গৌতম বুদ্ধের মতো মহামনীষীদের আবির্ভাব ঘটেছে ।লোকসমাজে তাঁদের উপস্থিতি মহাসূযের মতোই আলোকোজ্জ্বল ।সাধারণ মানুষ সেই আলোকের সাহায়্যেই পথ খুঁজে পেয়েছে ।মানুষকে তাঁরা দিয়ে গেছেন মহাজীবনের মন্ত ।কিন্তু তাঁদের অনুপস্থিতিতে কি মানব-সভ্যতার অগ্রগতি রুদ্ধ হয়ে যাবে?নিশ্চয়ই নয়।সে দায়িত্ব আমাদের ।সকলের ।
অসাধারণ ব্যক্তিদের তুলনায় সাধারণ মানুষের কর্মক্ষমতা সীমাবদ্ধ ।অসংখ্যা প্রদীপ যেমন সূযের অভাবকে বিদূরিত করে,তেমনি অগনিত মানুষ সীমিত কর্মক্ষমতা নিয়েও মহামনীষীদের শূন্যস্থানকে পূর্ণ করে তুলতে পারে ।শক্তি ও সামর্থ্যের ক্ষুদ্রতার কথা ভেবে হীনস্মন্যতায় পশ্চাৎপসরণ করলে সভ্যতাকে বিপন্ন করে তোলা হবে ।প্রদীপের মতোই আত্নসওাকে আলোকিত করে তুলতে হবে ।