ব্যকরণ

উপসর্গ কি? উপসর্গ কাকে বলে? উপসর্গ কত প্রকার ‍ও কি কি- snigdhasokal.com

উপসর্গ কি বা উপসর্গ কাকে বলে? : বাংলা ভাষায় এমন কতগুলো শব্দ ও শব্দাংশ আছে যেগুলো নতুন শব্দ তৈরি ও অর্থের পরিবর্তনে সহায়তা করে। এগুলোই উপসর্গ।  তাই উপসর্গের আলোচনা একান্ত অপরিহার্য।

উপসর্গ কি বা উপসর্গ কাকে বলে? উপসর্গ  কত প্রকার ‍ও কি কি- snigdhasokal.com

উপসর্গ কাকে বলে?

যেসব বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি ধাতু বা কৃদন্ত পদ এবং নাম পদের পূ্র্বে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন ও পদের অর্থের পরিবর্তন করে, তাকে  উপসর্গ বলে।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, –  ‘প্র, পরা, প্রভৃতি ‘শব্দ’ ধাতুর পূ্র্বে বসিয়া একই ধাতুর নানাবিধ অর্থ প্রকাশ করে। ইহাদিগকে উপসর্গ বলে। যেমন – ‘দান’ শব্দটির পূর্বে আ, প্র, প্রতি, অব – এ চারটি ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ভিন্ন ভিন্ন শব্দ গঠিত হতে পারে। যেমন:-
আ – আ + দান = আদান
প্রতি – প্রতি + দান = প্রতিদান
প্র- প্র + দান = প্রদান
অব – অব + দান = অবদান

উপসর্গের কাজঃ

উপসর্গ কথাটির অর্থ ‘উপসৃষ্টি’। উপসর্গগুলো এক ধরনের অব্যয়। এদের নিজস্ব কোনো অর্থ নেই এবং পৃথকভাবে এদের প্রয়োগও হয় না। উপসর্গের কাজ হচ্ছে নতুন শব্দ তৈরি করা । উপসর্গ শুধু শব্দই তৈরি করে না, শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে মূলের অর্থের পরিবর্তন ঘটায়,  অর্থের বিশিষ্টতা দান করে। এক কথায় বলা যায়, শব্দগঠনে অর্থের দিক থেকে বৈচিত্র্য আনাই উপসর্গের কাজ। উপসর্গযোগে শব্দের যে ধরণের পরিবর্তন ঘটে তা নিম্নরূপ:
ক. নতুন অর্থবোধক শব্দের সৃষ্টি ঘটে। যেমন – ছায়া থেকে প্রচ্ছায়া।
খ. শব্দের অর্থ পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। যেমন : পুষ্টি থেকে পরিপুষ্টি।
গ. শব্দের অর্থ সম্প্রসারিত হয়। যেমন : তাপ থেকে পরিতাপ।
ঘ. শব্দের অর্থ সীমা সংকুচিত হয়। যেমন: রাজি থেকে নিমরাজ্
ঙ. শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটে। যেমন: কথা থেকে উপকথা।

উপসর্গের প্রয়োজনীয়তাঃ

বাংলা ভাষায় উপসর্গের প্রয়োজনীয়তা বহুবিধ। নিচে তার কিছু উল্লেখ করা হলো:
প্রথমত: উপসর্গ নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরি করে। মব্দের পূর্ণতা সাধন করে । সুতরাং নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরি এবং শব্দের অর্থের পূর্ণতা সাধনে উপসর্গের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
দ্বিতীয়ত: কেবল নতুন শব্দ সৃষ্টিই নয়, শব্দের অর্থের প্রসারণ, সংকোচন এবং শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটাতে উপসর্গ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 
তৃতীয়ত, উপসর্গ স্বয়ং কোনো অর্থ প্রকাশ করে না, কিন্তু ধাতুযোগে বিশেষ স্থলে বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে।
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন – “উপসর্গ থাকে সামনে প্রত্য থাকে পেছনে! তাহার আছে একই শব্দের নানা অর্থ বানানোর কাজ ।” এ উক্তি থেকে উপসর্গের প্রয়োজনীয়তার কথা উপলব্ধি করা যায়

উপসর্গ কত প্রকার ও কি কি?

 বাংলা ভাষায় উপসর্গ তিন প্রকার যথা –
  • তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গ
  • খাঁটি বাংলা উপসর্গ
  • বিদেশি উপসর্গ

১. তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গঃ

বাংলা ভাষায় অনেক সংস্কৃত উপসর্গ আছে এসব সংস্কৃত উপসর্গসমূহ শব্দের আগে বসে নতুন নতুন শব্দ গঠন করে। সংস্কৃত উপসর্গ ২০ টি  যেমনঃ – প্র, প্রতি, পরা, পরি, অতি, অভি, অপ, অপি, অনু, আ, অধি, অব, নি, নির, উপ, উৎ, সু, সম, দূর, বি।
উদাহরণঃ প্র – প্রভাব, প্রতাপ, প্রসিদ্ধ, প্রস্থান, প্রবেশ, প্রগতি, প্রকাশ, প্রভাত, প্রবোধ, প্রবাহ, প্রসিদ্ধ, প্রস্থান, ইত্যাদি।

২. খাটি বাংলা বি দেশি উপসর্গ

খাটি বাংলা উপসর্গ সংস্কৃত উপসর্গের ন্যায় শব্দের পূর্বে বসে নতুন শব্দ গঠন করে। বাংলা ভাষায় খাটি বাংলা উপসর্গ মোট ২১  টি। এগুলো হলো – অ, অঘা, অজ, অনা , আর , আন , আব, ইতি, উন, কদ্, কু, নি, পাতি, বি, ভর, রাম., স, সা, সু, হা।
উদাহরণঃ অ – অকেজো, অমিল, অঝর, অঘোর, অকাজ, অপয়া, অশিষ্ট
অঘা – অঘারাম
অজ – অজমূর্খ, অজপাড়া গাঁ
অ না – অনাদার, অনাবৃষ্টি
আ – আগাছা, আধোয়া, আঁকড়া
আড় –  আড়চোখ
আন – আনকোরা
আব – অস্পষ্টতা
ইতি – ইতিকর্তব্য
ঊন – ঊনপাঁজুরে
কদ্ – কদবেল, কদর্য
কু – কুঅভ্যাস
নি – নিখুত, নিখোজ
পাতি – পাতিহাঁস
বি – বিভূঁই বিফল, বিপথ
ভর – ভরপেট
রাম – রামছাগল
স – সরাজ, সরব, সঠিক, সজোর
সা – সাজিরা, সাজোয়ান
সু – সুনজর, সুখবর, সুদিন
হা – হাপিত্যেশ, হাভাতে, হাঘরে।

৩. বিদেশি উপসর্গঃ

প্রাচীনকাল হতে বাংলাদেশের সাথে বিদেশিদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। বিদেশিরা নান কাজে  এদেশে এস দেশবাসীর সাথে কর্মজীবনে বিভিন্ন রকম আদান-প্রদান করে। ফলে কয়েকটি বিদেশি উপসর্গ বাংলা ভাষায় প্রচলিত হয়।
যেমন ঃ-  
  • আরবী উপসর্গ
  • ফারসি উপসর্গ
  • হিন্দি উপসর্গ
  • ইংরেজি উপসর্গ
আরো পড়ুনঃ শব্দ কাকে বলে?

আরবী উপসর্গ

আরবী উপসর্গগুলো হলো – আম, খাস, লা, গর, খয়ের, বাজে, ব ইত্যাদি।
উদাহরণ: আম – আমমোক্তার, আমদরবার, আমকথা, আম বয়ান,
খাস – খাসদখল, খাসমহল, খাসকামরা, খাসসংবাদ, খাসকথা
লা – লাপাত্তা, লাখেরাজ, লা – জওয়াব
খয়ের – খয়ের খাঁ।
– বদনাম
বাজে– বাজে কথা, বাজে খরচ, বাজে জমা, বাজে কাজ

ফারসি উপসর্গ

ফারসি উপসর্গগুলো হলো – কার, দর, না, নিম, ফি, বদ, বে, বর,ব, ক,
কার – কারখানা, কারসাজি, কারচুপি, কারবার, কারদানি
দর –  দরপত্তনী, দরপট্টা, দরদালান
 না –  নাচার , নারাজ, নামঞ্জুর, নাখোশ, নালায়েক
নিম – নিমরাজি, নিমখুন
ফি – ফি -রোজ, ফি – হপ্তা
বদ – বদমেজাজ, বদরাগী, বদমাশ, বদহজম, বদনাম
বে – বেআদব, বেআক্কেল, বেকসুর
বর – বরখাস্ত, বরদাস্ত, বর খেলাপ, বরবাদ
ব – বমাল, বনাম, বকলম
কম – কমজোর, কমবখত,
আরো পড়ুনঃ শব্দ কাকে বলে?

ইংরেজি উপসর্গঃ

ফুল, হাফ, হেড, সাব
ফুল – ফুল – হাতা, পূল – শার্ট, ফুল – বাবু
হাফ – হাফ – হাতা
হেড – হেড মাস্টার
সাব – সাব অফিস, সাব জজ ইত্যাদি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button